রাজ্য সড়কে ভাসছে নৌকা, সাটুইয়ে পারানি হাঁকছে মাঝি

সকাল দেখে সবসময় বোধহয় সারাদিনের আন্দাজ করা যায় না! বৃহস্পতিবার সাতসকালে ঝলমলে রোদ দেখে দুই জেলার বাসিন্দাদের মনে হয়েছিল—দুর্যোগ বুঝি কাটছে। এ যাত্রা বোধহয় রেহাই মিলল। কিন্তু কোথায় কী!

Advertisement

সুজাউদ্দিন ও কৌশিক সাহা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০০:২৭
Share:

প্রতীক্ষালয়ে বাস নয়, অপেক্ষায় রয়েছে নৌকা। বহরমপুরের সাটুইয়ে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

সকাল দেখে সবসময় বোধহয় সারাদিনের আন্দাজ করা যায় না!

Advertisement

বৃহস্পতিবার সাতসকালে ঝলমলে রোদ দেখে দুই জেলার বাসিন্দাদের মনে হয়েছিল—দুর্যোগ বুঝি কাটছে। এ যাত্রা বোধহয় রেহাই মিলল। কিন্তু কোথায় কী! বেলা বাড়তেই রোদ উধাও। ঘন কালো মেঘ। দুপুরের পরে ঝোড়ো হাওয়া। বজ্রপাতের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। নিট ফল, নদী ও বৃষ্টির জল নিয়ে আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

কেন বিপদ

বর্ষার শুরু থেকেই দুই জেলায় নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। গত জুন মাসে নদিয়ায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৫৬৯ মিলিমিটার। ৩০ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬০৯ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬ মিলিমিটার। এরপরেও বৃষ্টি থামার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। গঙ্গা, জলঙ্গি, দ্বারকা-সহ নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। নদিয়ার স্বরূপগঞ্জের কাছে চরম বিপদসীমা অতিক্রম করে গঙ্গার জলস্তর ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

বুধবার বিকেল পাঁচটায় যেখানে জলস্তর ছিল ৯.১১ সেমি। বৃস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় সেই জলস্তর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২৮ সেমি। অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদে হিজল এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে জলবন্দি হয়ে পড়েছে বড়ঞা, সুন্দরপুর, সাটুই, নবগ্রাম, নিয়াল্লিশপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকা। চাঁদপাড়া এলাকায় গ্রাম সুরক্ষার বাঁধ ভেঙে গিয়ে জল ঢুকতে শুরু করেছে। নতুন করে জলবন্দি হয়ে পড়েছে ওই এলাকার বেশ কিছু গ্রাম। বৃহস্পতিবার সকালে ময়ুরাক্ষীতে তিলিপাড়া ব্যারাজ থেকে ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে।

ত্রাণ শিবির

বহরমপুর ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সাটুইয়ের ফ্লাড শেল্টার, সন্তোষনগর, হটনগর-সহ মোট সাতটি এলাকায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রয়োজনে এলাকার স্কুলগুলিতেও ত্রাণ শিবির খোলা হবে। হিজল, আন্দুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত, বড়ঞা, সালার এলাকায় মোট তেরোটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে শুকনো খাবার, পানীয় জলের পাউচ সরবরাহ করা হচ্ছে। দু’বেলা খিচুড়ির ব্যবস্থাও করেছে ব্লক প্রশাসন। ওই ত্রাণ শিবিরে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার মানুষ। নবদ্বীপের ফকিরডাঙ্গা-ঘোলাপাড়া, মহিশুরা এবং মায়াপুর-বামুনপুকুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। নবদ্বীপ পুর এলাকার বিভিন্ন স্কুলেও জলমগ্ন এলাকা থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছেন। কালীগঞ্জ ও
নাকাশিপাড়ার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় আটশো মানুষ।

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। হিজলে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

কান্দি মহকুমার বড়ঞা, জাওহাড়ি, ভড়ঞা, সোনাভারুই-সহ অন্তত কুড়িটি গ্রামে রাস্তা জলমগ্ন। বন্ধ যান চলাচল। সাটুই এলাকায় বহরমপুর-রামনগরঘাট রাজ্যসড়ক প্রায় তিন ফুট জলের তলায়। সেখানে বাস নয়, নৌকা চলছে। গ্রামের ভিতরে বহু এলাকা জলমগ্ন থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নবদ্বীপের ফকিরডাঙ্গা-ঘোলাপাড়া, মহিশুরা, মায়াপুর-বামুনপুকুর ২ পঞ্চায়েতে নানা এলাকায় জল ঢুকেছে।

কান্দি মহকুমার ফকিরডাঙা-ঘোলাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে নবদ্বীপ ব্লকের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা জলের তলায়। একই অবস্থা মহিশুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকারও। এ দিন ভোর সাড়ে চারটে থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল নবদ্বীপের প্রতাপনগর, প্রাচীন মায়াপুর, রানিরচড়ায়।

ভরসা নৌকো

সাটুই এলাকার পোড়াডাঙায় বহরমপুর-রামনগর রাজ্য সড়কের বেশ কিছুটা অংশ জলের তলায়। বন্ধ যান চলাচল। ওই রাজ্য সড়ক দিয়ে এখন নৌকো চলছে। যাত্রীদের ভরসা এখন মাঝি। এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে একশো টাকা নৌকো ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিপদে পড়ে দাম-দর করারও সাহস পাচ্ছেন অনেকেই। মোটরবাইক নৌকোয় তুলে রাস্তা পেরোনোর সময় কুলগাছি এলাকার বাসিন্দা সাহেদুল মণ্ডল হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘ডাঙায় নৌকো চলার প্রবাদ শুনেছি আগেই। এখন রাজ্য সড়কের উপর দিয়েও নৌকো চলার সাক্ষী থাকলাম।’’ ভরতপুর, আলুগ্রাম এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য প্রশাসনের তরফে বিনামূল্যে নৌকোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ওঁরা বলছেন

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি চলছে। সেখানে ত্রাণ-সহ যাবতীয় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা ওই এলাকায় নিয়মিত যাচ্ছেন। কোথাও যাতে সমস্যা না হয় সে দিকে আমরা নজর রাখছি।’’ নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘ত্রিপল ও চালের ঘাটতি রয়েছে। জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় কমিটি গড়েছি। কমিটি ত্রাণের বিষয়ি দেখাবে।’’ জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত থাকছি। নজর রাখা হচ্ছে নদী বাঁধের উপরেও। সতর্ক করা হয়েছে সেচ দফতর-সহ অন্যান্য দফতরকে।’’

সহ প্রতিবেদন— দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিত হালদার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement