বার্তা দু’দফা। মিছিল-সমাবেশে ভিড় দেখে তুষ্ট হয়ে ওঠার কিছু নেই। আসল লড়াই বুথেই। আর দ্বিতীয়ত, লোকসভা ভোটে কার সঙ্গে কী ভাবে সমঝোতা হবে, তা নিয়ে মাথা খারাপ করে ফেলার দরকার নেই! লোকসভা ভোটের জন্য ঘর গুছোনোর আগে সব জেলার নেতৃত্বকে কলকাতায় ডেকে এই জোড়া বার্তা বুঝিয়ে দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। যে আসরে জেলার নেতাদের মুখোমুখি বসার কথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিরও।
ইদানীং কালে বামেদের মিছিল-সমাবেশে ভিড় হচ্ছে ভালই। কিন্তু শুধু সমাবেশের ভিড় দেখে সন্তুষ্ট না হতে সংগঠনকে হুঁশিয়ার করতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলছেন, ‘‘ব্রিগেডে প্রচুর লোক কিন্তু বুথে লোক পাওয়া গেল না— এমন যেন না হয়!’’ ইয়েচুরিরও মত, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতি অসন্তোষকে আমাদের দিকে টেনে আনা যাচ্ছে কি না, সেটাই আসল কথা।’’ প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে আগামী ২৩ ডিসেম্বর বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে ডাকা হয়েছে দলের সব জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং গণসংগঠনের নেতৃত্বকে। সেখানেই দেওয়া হবে সাংগঠনিক প্রস্তুতির বার্তা।
বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ে যে বিশেষ এঁটে ওঠা যাবে না, সে কথা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেসের সাম্প্রতিক কিছু কার্যকলাপে সিপিএমের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও কেরলের শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশে সঙ্ঘ পরিবারের সুরেই বাধা দেওয়া, মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে পঞ্চায়েত পিছু গো-শালা তৈরির প্রতিশ্রুতির পরে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভায় গরুকে ‘রাষ্ট্রমাতা’ ঘোষণার দাবিতে প্রস্তাব এনেছেন কংগ্রেস বিধায়কেরা! যাকে সমর্থন করেছে সে রাজ্যের শাসক বিজেপি। বাংলায় বাম শরিক নেতৃত্বের একাংশ কংগ্রেসকে নিয়ে যে আপত্তি তুলছেন, অন্য রাজ্যের এই ধরনের ঘটনায় তা কিছুটা মান্যতা পেয়েছে সিপিএমের মধ্যেও। এই পরিস্থিতিতে দলের সাধারণ সম্পাদককে সামনে রেখে লোকসভা ভোটের রণকৌশল ব্যাখ্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন।
আলিমুদ্দিনে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে শুক্র ও শনিবার। সেখানে আলোচনার পরে জেলার নেতাদের কাছে সরাসরি নির্দেশ, পরামর্শ পৌঁছে দেবেন ইয়েচুরি, সূর্যবাবুরাই। কোন রাজ্যে কী নির্বাচনী কৌশল নেওয়া উচিত, সেই প্রশ্নে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজ্য নেতৃত্বের লিখিত মতামত চেয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই কাজও ব্যাখ্যা করা হবে জেলার নেতাদের কাছে।
ইয়েচুরিদের সিদ্ধান্ত, এ রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোটকে একজোট করতে হবে। সূর্যবাবুরা দলের অন্দরে ব্যাখ্যা করে বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের আদর্শগত ফারাক অবশ্যই আছে ও থাকবে। কিন্তু এখানে বিজেপি ও কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্বের কথা বলার মানে তৃণমূলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ কমানো! কংগ্রেস কী অবস্থান নেবে, তার জন্য অপেক্ষা করার পাশাপাশিই নিজেদের সাংগঠনিক কাজ সেরে নিতে হবে।