বেবি মুখোপাধ্যায় ও বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়
ভাইয়ের জন্য ক’জন বোন এমন ‘যমের দুয়ারে কাঁটা’ দিতে পারেন!
আয়ু বাড়াতে ভাইয়ের কপালে ঘি, চন্দনের ফোঁটা দেন বোনেরা। সেই উৎসবই ভাইফোঁটা। মঙ্গলবার রাজ্যের ঘরে-ঘরে ভাইদের কপালে এমন ফোঁটা দিয়ে যখন দীর্ঘায়ুর কামনা করছিলেন বোনেরা, তখন ইএম বাইপাস সংলগ্ন মুকুন্দপুরের হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে দাদার জন্য আক্ষরিক অর্থেই ‘যমের দুয়ারে কাঁটা’ দিয়েছেন মধ্যমগ্রাম সাজিরহাটের বাসিন্দা বেবি মুখোপাধ্যায়।
কী ভাবে?
বেবির দাদা বছর পঁয়তাল্লিশের বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি কিডনি বিকল হয়ে পড়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে দাদাকে নিজের একটি কিডনি দান করেছেন বেবি। এ বার বোনের কিডনি শরীরে নিয়েই নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার পথে এগোচ্ছেন বাপিবাবু।
ডাক্তাররাই হেসে বলছেন, উৎসবের ভাইফোঁটা থেকে এই ‘ভাইফোঁটা’ কীসে কম!
চলতি বছরের মে মাসে আচমকাই বাপিবাবুর দু’টি কি়ডনিতেই সমস্যা ধরা পড়ে। কিডনির সমস্যা চরমে ওঠায় প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায় বলে জানিয়ে দেন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকেরা। নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে বাপিবাবুর বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং কন্যাসন্তান। কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে প়ড়েছিল তাঁদের।
বাপিবাবুর স্ত্রী দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দাদার এমন অবস্থা শুনেই কিডনি দানে এগিয়ে আসেন তাঁর থেকে দু’ বছরের বোন। দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ ‘ও-পজিটিভ’। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেও কিডনি প্রতিস্থাপনে কোনও সমস্যা ছিল না। বেশ কয়েক বার তারিখ অদলবদল করে শেষমেশ ১ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের
দিন স্থির করেন চিকিৎসক। তবে সেটাই যে ভাইফোঁটার দিন, তা কারও খেয়াল ছিল না।
বাপিবাবুর স্ত্রী দীপান্বিতা এবং বেবির স্বামী অলীক মুখোপাধ্যায় দু’জনেই বলছেন, কী ভাবে যেন দিনটা মিলে গেল! দীপান্বিতার কথায়, ‘‘তখন যা টেনশনে ছিলাম, এ সব কথা মাথাতেই আসেনি। অপারেশনের পরে খেয়াল হল, দিনটা তো ভাইফোঁটার।’’
মঙ্গলবার ভাইফোঁটার দিন ইএম বাইপাসের কাছে মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালে নেফ্রোলজিস্ট প্রতীক দাস এবং দুই ইউরোলজিস্ট তাপস সাহা ও সুরেশ বাজোরিয়ার নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল বোনের শরীর থেকে দাদার শরীরে কি়ডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। বাপিবাবু এখন আইসিইউয়ে রয়েছেন। বোন আইটিইউয়ে চিকিৎসাধীন। বুধবার আইটিইউয়ে শুয়েই বেবি তাঁর বৌদিকে শুধু বলেছেন, ‘‘দাদার জন্য কিডনি দিয়ে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
পরিবহণ দফতরের কর্মী বেবির বাড়িতে স্বামী ও অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে রয়েছে। এ দিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়েই স্বামী অলীকবাবু জানান, তাঁর স্ত্রী নিজের দাদাকে কিডনি দান করবেন, এটা জানার পর কোনও আপত্তি করেননি তিনি। বরং স্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। শুধু চিন্তা ছিল কঠিন এই অস্ত্রোপচার নিয়ে।
চিকিৎসক দলের প্রধান প্রতীক দাস এ দিন জানিয়েছেন, প্রতিস্থাপন সফল ভাবেই হয়েছে। দু’জনকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তাঁরা। বুধবার রাত পর্যন্ত কারও শরীরে সমস্যা দেখা যায়নি। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘বোনের কিডনি আগেও ভাইয়ের শরীরে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাইফোঁটার দিনে এমন অপারেশন করিনি।’’