নিউমার্কেটে প্লাস্টিকের পসরা নিয়ে বিক্রেতা। —নিজস্ব চিত্র।
প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘মন কি বাত’ হোক বা স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার বক্তৃতা— সব জায়গাতেই এ বিষয়ে গণসচেতনতার ডাক দেন তিনি। ২ অক্টোবর মহাত্মা গাঁধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী থেকে সেই অভিযান শুরু হবে বলেও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী কাল সেই সন্ধিক্ষণ। কিন্তু কলকাতা কতটা তৈরি? এ রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন বা পুরসভাও কি প্লাস্টিক রোধে নজরদারি জোরদার করছে?
সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গত কয়েক মাসে অনেকেই এই বিষয়ে সচেতন। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন নিয়মে যে জরিমানার কথা রয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় কলকাতা পুরসভা। মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, “প্লাস্টিক নিয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই সচেতনতার পাশাপাশি অভিযান চালাই। কিন্তু কেন্দ্রের নিয়ম নিয়ে রাজ্যের তরফে আমাদের কাছে কোনও বিজ্ঞপ্তি আসেনি। যদি আমাদের বলা হয়, কেন্দ্রীয় নিয়ম মানতে হবে, মানব। আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে।”
জানবাজারে মুদিখানার দোকানে আইন মেনেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: কোনও হিন্দুকে ভারত ছাড়তে হবে না, এনআরসির আগে নাগরিকত্ব আইন, বলে গেলেন শাহ
২০২২-এর মধ্যে দেশকে ‘সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক’ মুক্ত করতে চায় কেন্দ্র। অর্থাৎ এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক আর চলবে না। সে জন্য প্রথম ধাপে তারা ১২টি জিনিস নিষিদ্ধ করার পক্ষে। তার মধ্যে রয়েছে ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ (হাতল যুক্ত এবং হাতল ছাড়়া), ২০০ মিলি লিটারের কম তরলের জন্য তৈরি প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের জলের পাউচ, একবার ব্যবহার যোগ্য থার্মকলের থালা-গ্লাস-বাটি-চামচ, ছোট প্লাস্টিকের কাপ, বিভিন্ন রেস্তরাঁয় খাবার দেওয়ার জন্য প্লাস্টিকের পাত্র-সহ অনেক কিছু।
নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের দ্রব্যগুলো কেউ ব্যবহার করলে প্রথমে ৫ হাজার, দ্বিতীয় বার ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়লে ১০ হাজার এবং তৃতীয় বার ২৫ হাজার টাকা জরিমানার সঙ্গে ৩ মাসের জেলও হতে পারে। তবে জরিমানার থেকেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে বেশি আগ্রহী কেন্দ্র।
প্লাস্টিক-মুক্ত সমাজ গড়ে উঠুক, এমনটা চাইছে রাজ্য প্রশাসনও। কিন্তু যে ভাবে জরিমানার অঙ্ক ধার্য করা হবে বলে জানা গিয়েছে, তাতে সহমত নয় কলকাতা পুরসভা। স্বপন সমাদ্দারের কথায়: “আমরা আগে ৪০ মাইক্রনের উপর প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছি। এর পর তা বাড়িয়ে ৫০ মাইক্রন করা হয়েছে। তার কম মাইক্রনের প্লাস্টিক যদি কেউ ব্যবহার করেন, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আরও কড়া আইন আনার জন্য একটি খসড়া তৈরি করে রাজ্যকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তা বিবেচনাধীন।”
আরও পড়ুন: রাজীবের কাছে ‘হার’ সব দিকেই, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই
ভারত-সহ গোটা পৃথিবী প্লাস্টিক দূষণের শিকার। সে কথা মাথায় রেখে গত ১৫ অগস্ট লালকেল্লার বক্তৃতাতেও প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে সরব হয়েছিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তৃতার পরে ভারতীয় রেল সিদ্ধান্ত নেয়, ২ অক্টোবর থেকে ট্রেন ও স্টেশন চত্বরে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে। সেই আন্দোলনকে বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যেতে দেশের সব পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা প্রশাসন এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে প্লাস্টিক-মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আর্জি জানান মোদী। আগেই গোটা দেশে ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’ প্রচারাভিযান শুরু করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে কলকাতার একটি নামী রেস্তরাঁর সুপারভাইজার কার্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ফুড ইনস্পেক্টররা নিয়মিত খোঁজ নেন। আমরা আইন মেনেই প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি। প্লাস্টিকের কন্টেনর যদি বাদ দেওয়া হয়, তা হলে আমারও তা ব্যবহার করব না।” একই মত নিউ মার্কেট চত্বরের একটি নামী বিরিয়ানির রেস্তরাঁও। তারাও চায়, প্লাস্টিক বর্জন হোক। জানবাজারের একটি মুদিখানা দোকানের মালিক জগদীশ গুপ্ত বলেন, “আমার ৫০ মাইক্রনের উপরেই প্লাস্টিক ব্যবহার করি। যা নিময় হবে, তা সকলের মানা উচিত।”