আমার ক্ষতি করবে কে! জেলেও নির্ভয় ছিল ‘ডন’

নিজের খাসতালুকেই খুন হয়ে গিয়েছে রেলশহরের ‘ডন’ শ্রীনু নায়ডু। ২৪ ঘণ্টা পরেও কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক আবাসিক।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়ডু। — নিজস্ব চিত্র।

নিজের খাসতালুকেই খুন হয়ে গিয়েছে রেলশহরের ‘ডন’ শ্রীনু নায়ডু। ২৪ ঘণ্টা পরেও কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক আবাসিক। এক সময় শ্রীনুর সহ-বন্দি বছর চল্লিশের এই যুবক বুধবার সন্ধেতেই কানাঘুষোয় শুনেছিল, শ্রীনু আর বেঁচে নেই। কথাটা ঠিক মনে হয়নি তার। খচখচানি দূর করতে বৃহস্পতিবার সকালে এক পরিচিত অফিসারকে দেখতে পেয়ে জেলবন্দি ওই যুবক সটান জিজ্ঞেস করে, ‘‘শ্রীনু খুনের কথাটা সত্যি?’’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ শোনার পরে ওই বন্দির বিস্ময় আরও বেড়েছে। বারবারই সে বলছে, ‘‘যার এত দাপট, এমনকী জেল-কুঠুরিতেও যে ছিল ‘বাদশা’, সেই শ্রীনুকে এ ভাবে মরতে হল!’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার দিনভর মেদিনীপুর জেলের অন্দরে শ্রীনু-চর্চা চলেছে। এক সময়ের সহ-বন্দিদের আলোচনায় বারবার ফিরে এসেছে এ শ্রীনিবাস নায়ডু অর্থাৎ শ্রীনুর হাজতবাসের দিনগুলোর কথা। এই মেদিনীপুর জেলেই বেশ কয়েকটা বছর কাটিয়েছিল তেলুগু যুবক শ্রীনু। মাফিয়া দুনিয়ায় তার যে গুরু সেই বাসব রামবাবুর সঙ্গেও শ্রীনুর পরিচয় এই জেলে। ২০১৫ সালের মে মাসেও মেদিনীপুর জেলে ছিল শ্রীনু। ওটাই তার শেষ হাজতবাস। তখন জেলের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তার সঙ্গে আরও জনা কুড়ি বন্দি ছিল। মেদিনীপুর জেলের এক অফিসার বলছিলেন, “জেলের মধ্যে কিন্তু শ্রীনু বেশ ঠান্ডাই থাকত। বেশি কথা বলত না। আমাদের সঙ্গে কখনও মেজাজ চড়িয়ে কথা বলেনি।”

তবে গরাদের ওপারেও একই রকম দাপট ছিল শ্রীনুর। জেল সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে বন্দি থাকাকালীন শ্রীনুকে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে ৩২ নম্বর সেলে একা রাখার তোড়জোড় হয়েছিল। সে কথা কানে পৌঁছতেই বেঁকে বসে শ্রীনু। সোজা জানিয়ে দেয়, সে সেলে যাবে না। ওয়ার্ডেই থাকবে। শেষমেশ শ্রীনুর সিদ্ধান্তেই কিন্তু সিলমোহর পড়ে। হাজতবাসের শেষ দিন পর্যন্ত ওই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অন্য বন্দিদের সঙ্গেই ছিল সে।

Advertisement

জেলে থাকাকালীনও শ্রীনু বারবার বুঝিয়েছে, আর পাঁচজন বন্দির সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। দু’বছর আগে শেষ জেলবন্দি থাকাকালীন হাতে আংটি রাখা নিয়ে ঝামেলার সময়ও শ্রীনুর সেই দাপটই দেখা গিয়েছিল। দক্ষিণী ছবির নায়কের মতো চেহারা ছিল শ্রীনুর। সব সময়ের সঙ্গী আঙুলে দু’টো আংটি, হাতে বালা, দু’কানে মাকড়ি, গলায় মোটা চেন— সব সোনার। ২০১৫ সালের এপ্রিলে শেষ বার জেলে ঢোকার সময় অত গয়না দেখে ধমক উঠেছিলেন জেলের এক অফিসার। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, জেলের মধ্যে হাতে-গলায় গয়না রাখা যাবে না। কিন্তু আংটি-চেন খুলতে রাজি হয়নি শ্রীনু। সে জানিয়ে দেয়, এ সব থাকবে। এবং তা ছিলও।

জেলের এক অফিসার বলছিলেন, “বন্দিদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আংটি, চেন খুলে রাখতে বলা হয়। কিন্তু খড়্গপুরের ওই যুবক জানিয়েছিল, তার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। তার ক্ষতি করার মতো কেউ নেই।”

শেষ পর্যন্ত অবশ্য জীবনের সব থেকে বড় ক্ষতি ঠেকাতে পারেনি শ্রীনু। খাসতালুকই হয়ে গিয়েছে তার বধ্যভূমি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement