ফাইল চিত্র।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাংগঠনিক বৈঠকে রবিবার নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করার দাবিতে ফের সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কারণ সিএএ এখনও কার্যকর না হওয়ায় মতুয়ারা ক্ষুব্ধ। এই প্রেক্ষিতে সোমবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানালেন, সিএএ কার্যকর করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে জানতে চাইবেন তাঁরা।
গোপালনগরের রঘুনাথপুর এলাকায় এ দিন চড়ুইভাতি করেন শান্তনু, রাজ্য বিজেপির সদ্য প্রাক্তন সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারি, সদ্য প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, বনগাঁ উত্তর ও কৃষ্ণগঞ্জের দলীয় বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া ও আশিস বিশ্বাস-সহ এক ঝাঁক নেতা, যাঁরা এখন দলে ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর মুখ হিসাবে পরিচিত।
দুপুরে খাওয়ার পরে শান্তনু সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আগামীতে ভারত সরকার সিএএ কার্যকর করতে কী পদক্ষেপ করছে, তা প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমাদের জানতে হবে। সেই মতো আমাদের বার্তা পৌঁছতে হবে।’’ সিএএ কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের তরফে তাঁদের উপরে চাপ আসছে জানিয়ে শান্তনুর আরও মন্তব্য, ‘‘গত ৯ জানুয়ারির মধ্যে সিএএ কার্যকর করার যে মেয়াদ ছিল, তা শেষ হয়েছে। এই নিয়ে তৃতীয় বার এমন হল। আমাদের ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ ৫ লক্ষ সক্রিয় এবং ২০ লক্ষ সাধারণ সদস্য আছেন। উদ্বাস্তুদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ মতুয়া। ফলে আমাদের চাপ সামলাতেই হবে। সিএএ কার্যকর করা আমাদের কাছে বড় বিষয়।’’
রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের মধ্যে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব না থাকায় কয়েক দিন আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শান্তনু। শুধু মতুয়া এবং সিএএ প্রশ্নে নয়, রাজ্য বিজেপির নতুন পদাধিকারীমণ্ডলীতে সিংহভাগ পুরনো নেতা বাদ পড়া নিয়েও দলের অন্দরে অনেকেই ক্ষুব্ধ। দুই ক্ষেত্রের অসন্তোষকে এক সূত্রে গাঁথতে গত কয়েক দিন ধরে শান্তনু-সহ বিভিন্ন নেতার বাড়িতে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৈঠক করেছেন জয়প্রকাশ, রীতেশরা। শনিবার কলকাতায় পোর্ট ট্রাস্টের অতিথিশালায় শান্তনু এবং ওই নেতাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। তার পরে শান্তনু নাম না করে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর অপসারণ দাবি করেন। এ দিন চড়ুইভাতি উপলক্ষে ফের মুখোমুখি হন রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতারা। সূত্রের খবর, সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যের সমস্ত এলাকায় ওই নেতারা বৈঠক করবেন। পুরনো নেতা-কর্মীদের একত্রিত করা হবে। শান্তনু বলেন, ‘‘যদি দলে বেসুরোদের সংখ্যা বেশি হয়েও সুর বাজে, তা হলে মানুষ তাঁদেরই গ্রহণ করবেন। আমি একটা দলকে ভালোবাসি। সেই ভালোবাসার দলের যদি অদূর ভবিষ্যতে কোনও প্রকার ক্ষতির সম্ভবনা দেখা দেয়, তা হলে দায়িত্ববান মন্ত্রী-সাংসদ হিসাবে আমার কাজ সুরক্ষা দেওয়া। সব কিছু এক মুহূর্তে সমাধান হয় না। ভবিষ্যতে দলকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে আমরা ক্ষেত্র প্রস্তুত করছি।’’ আপাতত তিনি ‘সাংসদ সম্পর্ক যাত্রা’র মাধ্যমে জনসংযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ দিনের চড়ুইভাতিতে দেখা মেলেনি বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার এবং দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাসের। রঘুনাথপুর এলাকাটি গোপালনগর থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। স্বপন ও রামপদের বাড়িও সেই এলাকাতেই। চড়ুইভাতিতে তাঁদের কেন দেখা গেল না? দু’জনের কথায়, ‘‘আমাদের কোনও আমন্ত্রণ ছিল না।’’ এ বিষয়ে শান্তনুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি জানি না। যাঁরা আমন্ত্রণ করেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।’’
প্রসঙ্গত, এর আগে শান্তনু যে দিন কয়েক জন মতুয়া বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন, সে দিনও স্বপন সেখানে যাননি। আর রামপদকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরাতে চান শান্তনু এবং কয়েক জন বিধায়ক।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য মতুয়াদের সক্রিয়তায় অন্যায় দেখছেন না। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মতুয়ারা বিজেপির সঙ্গে আছেন। বিজেপি তাঁদের সম্মানের জন্য নাগরিকত্বের কথা ভেবেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিল পাশ করেছেন। আমরাই তা কার্যকর করব। কিন্তু তাঁরা সরকারকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এতে অন্যায়ের কিছু নেই।’’ একই সঙ্গে দিলীপের মন্তব্য, ‘‘আমরা খালি মতুয়াদের নিয়ে চিন্তিত নই। আদিবাসী, জনজাতি, রাজবংশীরাও বিজেপির সঙ্গে আছেন। তাঁদের আলাদা আলাদা সমস্যা আছে। সেগুলি আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’’
এ দিকে, বনগাঁ লোকালের পর এ দিন বিজেপির রাজ্য দফতরের আশপাশে এবং শ্যামপাজার এলাকায় রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে। টুইটারেও ‘সেভ বেঙ্গল বিজেপি’ নামে একটি হ্যান্ডল থেকে অমিতাভ, রাজ্য দলের কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত থেকে দলকে বাঁচানোর দাবি করা হয়েছে।
পোস্টার প্রসঙ্গে দিলীপের কটাক্ষ, ‘‘ভোটের পরে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও পোস্টার লাগানো হয়েছিল। কিছু লোক অতি বিপ্লবী, অতি হতাশ। তাঁরা এ সব করে বেড়াচ্ছেন। কিছু লোক কারও কাছ থেকে পয়সা নিয়েও করে থাকতে পারেন। এ সব নিয়ে ভাবনা-চিন্তারও সময় আমাদের নেই।’’ আর ‘বিক্ষুব্ধদের’ প্রসঙ্গে দিলীপের মন্তব্য, ‘‘আমাদের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক আছেন। তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উনি কথা বলুন। হয়তো তাঁদের সঙ্গে ঠিকমতো কথাবার্তা বলা হচ্ছে না। তাই তাঁরা একটু ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কথা বললেই ঠিক হয়ে যাবে।’’