‘ঐক্যের ম্যারাথন’। সম্মেলন উপলক্ষে এসএফআইয়ের উদ্যোগে। —নিজস্ব চিত্র।
সম্মেলন হচ্ছে সাংগঠনিক নিয়ম মেনে। তবে সেই সম্মেলনকে ঘিরেই ছক ভেঙে এ বার নানা অভিনব পরিকল্পনা নিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলন ঘিরে কোথাও আলোচনা-সভায় বলতে আসছেন পরিযায়ী শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের সন্তানেরা। কোথাও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের নিয়ে হচ্ছে ‘ঐক্যের ম্যারাথন’। কোথাও প্যালেস্টাইনের সঙ্গে সংহতিতে ‘লাইভ’ ছবি আঁকার ব্যবস্থা হচ্ছে, কোথাও মৃণাল সেনের শতবর্ষকে মনে রেখে ছবি দেখানো হচ্ছে। আবার খাস কলকাতায় রাস্তার ধারে হচ্ছে বইমেলাও। ছাত্র সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সমাজের সব অংশের মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টাই করছে এসএফআই।
মালদহ শহরে আগামী ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি হতে চলেছে এসএফআইয়ের ৩৮ তম রাজ্য সম্মেলন। সেই উপলক্ষে ২৪ তারিখ মালদহে সমাবেশে থাকার কথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, দীপ্সিতা ধর, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর রহমানদের। সিপিএম সূত্রের খবর, সৃজন ও প্রতীক-উর জুটির এ বার ছাত্র সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার কথা। কলকাতা ও জেলার প্রতিনিধিত্ব মিলিয়ে নতুন রাজ্য নেতৃত্ব সংগঠনের দায়িত্বে আসবেন। বহু রকমের পরিকল্পনা সাজিয়ে রাজ্য সম্মেলন থেকে বার্তা দিয়ে যেতে চাইছেন বিদায়ী ছাত্র নেতৃত্ব।
এসএফআই রাজ্য কমিটির পরিকল্পনায় এবং কোচবিহার জেলা কমিটির উদ্যোগে বুধবারই তুফানগঞ্জ শহরে বিভিন্ন জনজাতির ১৭৪ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে হয়ে গিয়েছে ‘ঐক্যের ম্যারাথন’। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা তাঁদের নিজস্ব পোশাক পরে জাতীয় পতাকা হাতে ম্যারাথনের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে ঐক্য বার্তা দিয়েছেন। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজনের কথায়, ‘‘গোটা দেশের সরকার যখন মানুষের ঐক্য ভেঙে ফেলতে মরিয়া, তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারও তাতে মদত দিচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে আমাদের রাজ্যের উওর প্রান্তের জেলাগুলোতে। ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর মানুষদের আলাদা আলাদা ভাবে ভাবতে বাধ্য করা হচ্ছে ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে। পিছিয়ে পড়া, জনজাতির ঘরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা লড়াই চালাচ্ছি সব অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার।’’
সম্মেলন উপলক্ষে উলেবেড়িয়ায় আলোচনা-সভায় বক্তা পরিযায়ী শ্রমিক, ক্ষেতমজুর ও সংখ্যালঘু কৃষক পরিবারের সন্তানেরা। নিজেদের জীবনের যন্ত্রণা, অভিজ্ঞতার কথা তাঁরা তুলে ধরবেন। হুগলির উত্তরপাড়ায় এসএফআই আয়োজিত ‘মিউজিক্যাল ফেস্টে’ দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশিই সলিল চৌধুরীর প্রাক্-শতবর্ষ পালনে সঙ্গীতানুষ্ঠান করার কথা দেবজ্যোতি মিশ্রের। প্রসঙ্গত, দেবজ্যোতির সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে সলিলের সঙ্গে কাজ করার। আবার তার পরের দিন বোলপুরে ‘মন্টু ও মার্ক্স’ নাটকটি মঞ্চস্থ করবে সৌরভ পালোধি-তূর্ণা দাসদের ‘ইচ্ছে মতো’। আলিপুরদুয়ারে চা-বাগানে আদিবাসী ছাত্রীদের নিয়ে ফুটবল ম্যাচ, লড়াই-আন্দোলনের বিভিন্ন ছবির সমাহার নিয়ে জলপাইগুড়িতে প্রদর্শনী, উত্তর ২৪ পরগনায় ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডি’ ও ‘ফ্ল্যাশ মব’, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃণাল সেন শতবর্ষে ছবি দেখানোর আয়োজনও হয়েছে। কলকাতায় কলেজ স্ট্রিটে রাস্তার উপরেই চলছে বইমেলা, যার উদ্বোধন করেছেন এসএফআইয়ের প্রথম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিমান বসু।
এসএফআইয়ের ৩৩তম কলকাতা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ছাত্র সমাবেশে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, ‘‘কলেজ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে বলছি। অনেক অতি-বামপন্থী আছে, যারা সামনে বিপ্লবী সাজে আর তলায় তলায় যোগাযোগ রাখে মোদী-বিজেপি কিংবা তৃণমূলের সঙ্গে। এই বামপন্থী সাজা মানুষগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে!’’ মন্দির তৈরিকে ঘিরে বিজেপির উন্মাদনা, তৃণমূলের ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা’ ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ছাত্র-যুবদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।