প্রতীকী ছবি।
যৌন পল্লিতে নিয়ে গেলে পুলিশ কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নজরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সেখানে না নিয়ে গিয়ে জনবসতি এলাকায় রাখলেই ধরা পড়ার ভয় কম। আবাসনের কিংবা এলাকার বাসিন্দাদের নজর এড়াতে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। তাতে কিশোরীর ছবি পাঠালেই সময়মতো চলে আসবে ‘খদ্দের’। এ ভাবে সহজেই সকলের নজর এড়িয়ে চালানো যাবে যৌন ব্যবসা। গত কয়েক মাস ধরে কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় এবং দক্ষিণ শহরতলিতে কিশোরীদের দিয়ে এ ভাবেই চালানো হচ্ছিল যৌন ব্যবসা। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ, বারুইপুর পুলিশ ও কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ওই সংস্থা জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে তাদের কাছে খবর আসছিল যে, শহরের বেশ কিছু জায়গায় এবং দক্ষিণ শহরতলির কয়েকটি আবাসনে কিশোরীদের জোর করে আটকে রেখে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য করছে কিছু লোক। খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের ‘অ্যান্টি-হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিট’-কে সঙ্গে নিয়ে বেহালার একটি আবাসনে অভিযান চালায় তারা। সেখান থেকে উদ্ধার হয় বছর চোদ্দোর এক কিশোরী। বাটানগরের বাসিন্দা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ওই মেয়েটি অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। সংসারে সাহায্য করার জন্য ভাল কাজের খোঁজ করছিল। আর সেই কাজের লোভ দেখিয়েই তার কিছু বন্ধুবান্ধব তাকে তুলে দিয়েছিল পাচারকারীদের হাতে। ওই কিশোরী ভেবেছিল, ভাল কাজ পাবে শহরে এসে। কিন্তু কলকাতায় আসার পরেই তার ভুল ভেঙে যায়, যখন শুরু হয় লাগাতার যৌন নিগ্রহ। উদ্ধারের পরে ওই কিশোরী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিকে জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে দশ জন করে তার উপরে যৌন নিগ্রহ চালাত!
ওই কিশোরীকে উদ্ধারের সূত্রেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে একাধিক পাচারকারী। আর সেই পাচারকারীদের সূত্র ধরেই খোঁজ মেলে বেহালার এক কিশোরীর। তার মা ও রিকশাচালক বাবা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় পড়শি এক মহিলা তাকে কাজের লোভ দেখিয়ে বাটানগরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। সেখানে যে বাড়িতে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানেই রোজ বিভিন্ন ধরনের লোক এসে তার উপরে যৌন নিগ্রহ চালাত। গত সেপ্টেম্বর মাসে বারুইপুরের একটি বাড়ি থেকেও উদ্ধার করা হয়েছিল ১৫ ও ১৬ বছরের দুই কিশোরীকে।
শহর ও শহরতলির বিভিন্ন বসতি এলাকায় কিশোরীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালানোর এই ধরনের ঘটনা সামনে আসার পরেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বুঝতে পারে, নারী পাচার ও যৌন ব্যবসার গতিপ্রকৃতি কী ভাবে বদলে গিয়েছে এখন!
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১৬ সালে তাদের করা একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যৌন ব্যবসার যে সামগ্রিক বিস্তার, তার প্রায় ১৮ শতাংশই চলছে বসতি এলাকায় এবং নাবালিকাদের দিয়ে। এবং সেই যৌন ব্যবসা চালাতে সোশ্যাল মিডিয়াকে খুব বেশি রকম ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। ফলে এলাকার লোকজনও সব সময়ে টের পাচ্ছেন না। বেহালা, বারুইপুর এবং বাটানগরেও এ ভাবেই চলছিল যৌন ব্যবসা। এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা অনেক সময়েই দামি মোবাইল, ভাল পোশাক বা এই ধরনের ছোট ছোট বিলাসিতার জন্য দেহ ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। আর সেই কাজ করতে গিয়ে ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে পাচারকারীদের। যৌন ব্যবসায় নামানোর পরেই তুলে রাখা হচ্ছে আপত্তিকর নানা ছবি। পরে কাজ করতে না চাইলে সেই সব ছবি দেখিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। কিশোরীদের অনেককেই আবার অন্য কোনও কাজের টোপ দিয়েও নিয়ে আসা হচ্ছে। তার পরে জোর করে নামানো হচ্ছে এই ব্যবসায়। বারুইপুর মহিলা পুলিশ ইউনিটের অফিসার ইন চার্জ কাকলি ঘোষের কথায়, ‘‘জনবসতি এলাকায় ওই কিশোরীদের দিয়ে এমন ভাবে কাজ করানো হচ্ছে, যা সত্যিই আতঙ্কের বিষয়।’’