বেড়মজুরে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প। — নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালির বেড়মজুরে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পে সকাল থেকে অভিযোগ জমা পড়ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত মোট ৭৩টি অভিযোগ ওই ক্যাম্পে জমা পড়েছে। অর্থাৎ, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮টি করে অভিযোগ পুলিশের ক্যাম্পে জমা পড়েছে। অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন মহিলারাও।
বেড়মজুরের পুলিশ-ক্যাম্পে অধিকাংশ অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে একটাই নাম, সিরাজউদ্দিন। যিনি এলাকায় সিরাজ ডাক্তার নামে অধিক পরিচিত। সন্দেশখালির ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তথা তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের ভাই এই সিরাজ।
শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রাম। শনিবার সকাল থেকে সেখানেই অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়েছে পুলিশ। ওই ক্যাম্পে অভিযোগ জমা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। বারাসতের ডিআইজি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বেড়মজুরে রয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ শোনার জন্য এই ধরনের ক্যাম্প আগামী দিনে সন্দেশখালির অন্য এলাকাতেও বসবে বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের তরফে তেমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বেড়মজুরের কাঠপোল নতুনবাজার এলাকায় চার মাথার যে মোড় রয়েছে, সেখানেই সিরাজের ক্লিনিক রয়েছে। ওই ক্লিনিকে রোগী দেখতেন শাহজাহানের ভাই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি শেষ বার দেখা গিয়েছিল সিরাজকে। তার পর থেকে তিনি কোথায়, কেউ জানেন না। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকায় অত্যাচার, জমি জবরদখলের মতো অভিযোগ রয়েছে। সিরাজের ওই ক্লিনিকের ঠিক উল্টো দিকে শনিবার ক্যাম্প বসিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ক্যাম্পে যে অভিযোগগুলি সকাল থেকে জমা পড়েছে, তার মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি সংক্রান্ত। এ ছাড়া, জমির পাট্টা নিয়ে ঝামেলা, এলাকায় অশান্তি, ভাঙচুরের কিছু অভিযোগ পুলিশকে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
বেড়মজুরে যে ক্যাম্প বসেছে, আগামী দিনে সন্দেশখালির অন্যান্য গ্রামেও তা দেখা যাবে। যে কোনও ধরনের অভিযোগ জানানো যাবে সেই ক্যাম্পে। তার উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি ক্যাম্পে এক জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসার থাকবেন। এ ছাড়াও থাকবেন উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। তবে একসঙ্গে অনেকে না এসে দু’তিন জন করে ক্যাম্পে এসে অভিযোগ জানানোর জন্য স্থানীয়দের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।
শাহজাহান, সিরাজদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের মূল অভিযোগ, তাঁরা গ্রামবাসীদের জমি দখল করে মাছের ভেড়ি তৈরি করেছেন। চাষের জমিতে খাল কেটে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের দিয়ে জোর করে কাজ করিয়ে টাকা না-দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শাহজাহানদের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে পথে নেমেছেন সন্দেশখালির মানুষ। প্রতিবাদীদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা। ঝাঁটা, লাঠি হাতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সন্দেশখালিতে এসেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এবং সুজিত বসু। তাঁরা গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং জমি ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যেখানে নোনা জল ঢোকানোর অভিযোগ রয়েছে, ২০ দিনের মধ্যে সেই সমস্যা মেটানোর কথা বলেছেন মন্ত্রীরা।