Pincon

টাকা ফেরতেরও নির্দেশ, পিনকনে ৮ জনের সাজা যাবজ্জীবন

আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মনোরঞ্জন। মৌসুমীর মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে রায়ের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২০
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

আর্থিক প্রতারণা মামলার প্রেক্ষিতেই ২০১৩ সালে নতুন আইন এনেছিল রাজ্য সরকার। সেই আইনে রাজ্যের প্রথম কোনও ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে রায়দান হল শনিবার। পিনকন-প্রতারণা মামলায় এ দিন সংস্থার কর্ণধার মনোরঞ্জন রায়-সহ আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত (তিন নম্বর) তথা অর্থনৈতিক অপরাধের বিশেষ আদালতের বিচারক মৌ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

সংস্থার স্থাবর, অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের দ্রুত টাকা ফেরানোর জন্য ‘ডিরেক্টর অফ ইকনমিক্স অফেন্স’কে নির্দেশও দিয়েছে আদালত। তমলুক আদালত চত্বর এ দিন মুড়ে ফেলা হয়েছিল নিরাপত্তার চাদরে। মামলায় ধৃত ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জনকে সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ তোলা হয় এজলাসে। মনোরঞ্জন এবং তাঁর স্ত্রী তথা সংস্থার ডিরেক্টর মৌসুমী রায় অবশ্য আসেননি। তাঁদের আইনজীবী আদালতে জানান, মনোরঞ্জন গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে যাবতীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়েও আদালতে আনা সম্ভব হয়নি। আর মৌসুমীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে নার্সিংহোমে ভর্তি মনোরঞ্জনকে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে টানা সাত মিনিট ধরে যাবজ্জীবনের সাজা পড়ে শোনান বিচারক। তার মতামত জানতে চাওয়া হলে, আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে উচ্চ

আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মনোরঞ্জন। মৌসুমীর মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে রায়ের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী অরিন্দম খাটুয়াও বলেন, ‘‘এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’’আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সওয়া ১২টা নাগাদ বিচারক ১৮ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১০ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির কথা শোনান। তবে মনোরঞ্জন ও মৌসুমী-সহ বাকি ৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ বিচারক দোষী সাব্যস্ত হওয়া আদালতে উপস্থিত ছ’জনকে যাবজ্জীবন সাজা শোনান। মনোরঞ্জন এবং মৌসুমী বাদে অন্য সাজাপ্রাপ্তরা হল— অরূপ ঠাকুর, দীপঙ্কর বসু, রাজকুমার রায়, রঘু জায়া শেট্টি, হরি সিংহ, বিনয় সিংহ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ৫ লক্ষ করে টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

Advertisement

অর্থনৈতিক দুর্নীতি দমন শাখার সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী সৌমেনকুমার দত্ত এবং বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে আর্থিক প্রতারণা মামলায় রাজ্য সরকার ‘ওয়েস্টবেঙ্গল প্রোটেকশন অফ ইনটারেস্ট অফ ডিপোজিটর ইন ফিনানশিয়াল এস্টাব্লিশম্যান্ট অ্যাক্ট, ২০১৩’ নামে নতুন আইন এনেছিল। সেখানে যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি প্রতারিতদের টাকা ফেরানোর সংস্থানও রয়েছে। সৌমেন, বিভাসেরা বলছেন, ‘‘ওই নয়া আইনেই এ দিন সাজা ঘোষণা হয়েছে।

পাশাপাশি, অভিযুক্তদের ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ১২০ বি ধারায় তিন বছর এবং ৪০৯ ধারায় সাত বছরের সাজা হয়েছে।’’ আদালতের রায়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি আমানতকারীরা। তাঁদের একটি সংগঠন ‘শহিদ মাতঙ্গিনী ফ্রিডম ফোরামে’র তরফে অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘এই রায়ে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ল। টাকা ফেরত পাওয়ার দিকে আমরা আরও এক ধাপ এগোলাম।’’ অন্য ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির মধ্যে ছ’বছর ধরে চলা সারদা মামলার তদন্তও শেষের পথে। সিবিআই সূত্রে দাবি, সব ঠিকঠাক এগোলে ২০২১-এর গোড়াতেই পেশ হতে পারে চূড়ান্ত চার্জশিট। অতিরিক্ত চার্জশিট পেশের অনুমতিও আদালতের থেকে রাখতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। তবে তদন্ত শেষ হলেও নারদ-কাণ্ডে চার্জশিট পেশ করতে পারছে না সিবিআই। কারণ, নারদ ভিডিয়োয় দেখানো সাংসদদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের অনুমোদন দিচ্ছেন না লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement