বামেদের জমায়েত। —সংগৃহীত।
সরকার থেকে বিরোধী দলে যাওয়ার পর ১২ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু সিপিএমের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, বিরোধী হিসেবে আন্দোলনে যে ঝাঁঝ দেখানো উচিত ছিল, তা দেখানো যায়নি। হাত ফস্কে অনেক ইস্যু বেরিয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলার সেই ‘নিরামিষ’ সিপিএমকে ‘বিরোধী মেজাজে’ ফেরার বার্তা দিলেন দলের পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সদস্য তথা সর্বভারতীয় কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা।
গত রবিবার থেকে রানি রাসমণি রোডে শ্রমিক-কৃষকদের একাধিক দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছিল বাম শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলি। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সমাবেশ ও রাজভবন অভিযান ছিল তাদের। তবে নামে ‘অভিযান’ থাকলেও ব্যারিকেড ভেঙে রাজভবনের দিকে এগোনোর পথে যায়নি বাম সংগঠনগুলি। একটি প্রতিনিধিদল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিয়ে আসে। পরে সমাবেশে হান্নান বলেন, ‘‘কর্মসূচি রোজ হবে। কিন্তু শুধু কর্মসূচি করলে হবে না। আন্দোলন করতে হবে আন্দোলনের মতো। লড়াইয়ের মতো লড়াই করতে হবে। যাতে শাসক টলে যায়।’’
হান্নান সংযুক্ত কিসান মোর্চার অন্যতম নেতা। কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির টিকরি সীমান্তে লাগাতার কৃষক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। ওই আন্দোলনের ফলেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল। সেই ধরনের আন্দোলনকে মডেল করেই বাংলার বাম কর্মীদের রাস্তায় থাকার বার্তা দিয়েছেন উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ।
১০০ দিনের কাজকে বাড়িয়ে ২০০ দিনের করা, শ্রম কোড বাতিল, বিদ্যুতে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বাতিল-সহ বেশ কিছু দাবিতে দেশের সব রাজ্যেই তিন দিনের কর্মসূচি নিয়েছিল বাম শ্রমিক, কৃষক সংগঠনগুলি। প্রসঙ্গত, বাংলার শাসকদল ১০০ দিনের বকেয়া টাকার দাবিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব। আবার বামেদের বক্তব্য, বাংলার শ্রমিকদের এই দুর্দশার মধ্যে পড়তে হচ্ছে দুই সরকারের কারণেই। সিটুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘স্মার্ট মিটার লাগাতে এলে প্রতিরোধ গড়ে আগে ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ঘটনা ঘটছে। যেখানে প্রতিরোধ, সেখানেই পিছু হটছে প্রশাসন।’’ বামেদের অনেকের বক্তব্য, একটা বড় অংশের কর্মীদের নাছোড়বান্দা আন্দোলনের মনোভাব থাকলেও নেতৃত্বের মানসিক জড়তার কারণেই তা করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবারের সভা থেকে হয়তো তাঁদেরই বার্তা দিতে চাইলেন হান্নান, তপনেরা।