বিদ্যুতের সাবস্টেশন গড়া নিয়ে ভাঙড়ে তুমুল গোলমালের স্মৃতি এখনও দগদগে। এরই মধ্যে পাওয়ার গ্রিডের ছ’টি সাবস্টেশন গড়ার জন্য নদিয়া জেলা প্রশাসনের কাছে জমি চাইল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।
গত ১৪ জানুয়ারি সংস্থার নদিয়ার জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে জেলার রিজিওনাল ম্যানেজার অবন্তী মিত্র জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতির জন্য ছ’টি ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন গড়া দরকার। প্রতিটির জন্য আধ একর জমি প্রয়োজন। তা এখনও চিহ্নিত হয়নি। জমি জোগাড় করে দেওয়ারই অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
রাজ্যের কোথাও যাতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম না থাকে, তার জন্য মূলত সরকারি জমিতে দেড়শোটিরও বেশি সাবস্টেশন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সাবস্টেশন গড়া রুখতে নন্দীগ্রামের ঢঙে রাস্তা কেটে, ব্যারিকেড গড়ে আন্দোলনে নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। তা সামাল দিতে কয়েক দিন হিমশিম খেয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।
এর পরেও তাঁরা সাবস্টেশন তৈরি করার জন্য জমি খুঁজছেন? অবন্তী মিত্র এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “সাবস্টেশন গড়ার জন্য জমি চেয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা চিঠি দিয়েছে। জমি চিহ্নিত করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের গোবরাপোতা ও দিগনগরের কোতোয়ালি, চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া, চাকদহের শিমুরালি, করিমপুর ২ ব্লকের কাঁঠালিয়া ও নাকাশিপাড়ার পাটিকাবাড়ি মৌজায় সাবস্টেশন গড়তে চাইছে তারা। কোন জমি তাদের দেওয়া হবে?
জেলাশাসক জানান, আগে খোঁজা হবে সরকারি জমি। তা না পেলে তাঁরা জমির মালিকদের আলোচনা করে সরাসরি জমি কিনবেন। ভাঙড়ে এই জমি ‘কেনা’ নিয়েই জবরদস্তির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাহিনীর বিরুদ্ধে। নদিয়ায় তার পুনরাবৃত্তি হবে না তো?
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, আগেও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জমি কেনা হয়েছে। করিমপুরে ফাজিলনগর সেতু বা নাকাশিপাড়ায় আড়পাড়ার সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য সরাসরি জমি কিনতে কোনও সমস্যা হয়নি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রয়োজনে সাবস্টেশনের জন্য জমি কিনতেও সমস্যা হবে না। মালিকের সম্মতি ছাড়া জমি নেওয়া হবে না।’’
তার মানে, বর্ধমানের কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে এনটিপিসি যে ভাবে কিছুটা সরকারি জমি পেয়েছে, আর বাকিটা চাষিদের সম্মতি আদায় করে সরাসরি কিনতে নেমেছে, সেই ‘মডেল’ই অনেকটা অনুসরণ করতে চাইছে নদিয়া। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলেন, “আমাদের সরকার জোর করে জমি নেওয়ার বিপক্ষে। সরকারি জমি একান্ত না মিললে মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেই জমি কেনা হবে।”