থানায় চললেন স্যার। —নিজস্ব চিত্র।
চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক শিক্ষককে। যিনি কিনা নিজেরই স্কুলের ছাত্রদের কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। নিজের মুখে যে কথা একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছেন না হাসনাবাদের আমলানির কুমারপুকুর হাইস্কুলের শিক্ষক দীপঙ্কর চক্রবর্তী। তাঁর হিসেব মতো হাজার ২৬ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ২ লক্ষেরও বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা!
গয়না বন্ধক দিয়ে টাকা জোগাড় করেছিলেন এক মহিলা। তাঁর দাবি, একমাত্র ছেলের পুলিশে চাকরি হবে শুনে টাকা দেন ওই শিক্ষকের হাতে। ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিজ্ঞানের শিক্ষক দীপঙ্করকে সোমবার দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয় স্কুলেই। পরে পুলিশ ডেকে তাঁকে ধরিয়ে দেয় ছাত্রেরাই।
হাসনাবাদ থানার অফিসার প্রভাত প্রামাণিক বলেন, ‘‘স্কুলের একাদশ শ্রেণির চার ছাত্রের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ মিলেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। টাকির চৌরঙ্গীর বাসিন্দা দীপঙ্কর চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে এক শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে চুক্তির ভিত্তিতে যোগ দেন দীপঙ্করবাবু। সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ তিনি স্কুলে এলে ছাত্রেরা তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। দীপঙ্করবাবু যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য শিক্ষকদের বসার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকী, স্কুলের গেটেও তালা ঝুলিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। খবর দেওয়া হয় থানায়।
প্রতারিত ছাত্র সলমন গাজি, সাবির আলি সর্দার বলেন, ‘‘কেবল টাকাই নয়, পুলিশের চাকরির ফর্ম ফিলাপ, মেডিক্যাল টেস্টের জন্য রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন দীপঙ্কবাবু। চাকরির পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, তা-ও লিখে দিয়েছিলেন। ওই স্কুলেরই রাকিবুল মোল্লা এবং রাইহান মোল্লা বলে, ‘‘দীপঙ্করবাবু বলেছিলেন, ওঁর এক আত্মীয় কলকাতা পুলিশের ডিআইজি। তিনিই চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এ কথা বলে প্রথমে ৫ হাজার টাকা করে নেন। পরে কিস্তিতে আরও টাকা দিতে হয় স্যারকে। কিন্তু তারপরেও চাকরি মেলেনি। বরং আজ নয় কাল করে সময় কাটাতে থাকেন দীপঙ্করবাবু। স্যারের কথাবার্তা মোবাইলে রেকর্ড করে ছাত্রেরা। তা থেকে প্রতারণার সন্দেহ গাড় হয়।
দীপঙ্করবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মেধাবী চার ছাত্রের ফল দেখে এবং তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে ওদের চাকরির প্রয়োজনীয়তার কথা বুঝেছিলাম। সংবাদপত্রে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল নেওয়া হচ্ছে দেখে ৩ হাজার টাকা করে তিন জনের কাছ থেকে এবং একজনের কাছ থেকে ১৭ হাজার মিলিয়ে মোট ২৬ হাজার টাকা নিয়েছি। রক্ত পরীক্ষা, ফর্ম ফিলাপ, প্রশ্ন জোগাড়ে সব টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন আমার বিরুদ্ধে দু’লক্ষেরও বেশি টাকা নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এর আগেও একটি স্কুলে চুক্তিভিত্তিতে শিক্ষকতা করার সময়ে প্রশ্নপত্র চুরি করে ছাত্রছাত্রীদের বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল দীপঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে আগেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে আছে মধ্যবয়সী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
কুমারপুকুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিতকুমার প্রান্থি বলেন, ‘‘সামান্য কয়েক মাস হচ্ছেও দীপঙ্করবাবু স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করছেন। এর মধ্যে তার সম্পর্কে নানা আপত্তিকর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এখন শুনছি ছাত্রদের চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন। ওঁকে আমরা স্কুল থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’’ স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক রুহুল আমিন গাজি বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি, আগে যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন দীপঙ্করবাবু, সেই স্কুলের প্রশ্নপত্র বিক্রি করার অভিযোগে ওঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমরা ঠিক করেছিলাম, সোমবারই সভা করে ওঁকে স্কুল থেকে সরিয়ে দেব। তার আগেই ছাত্রদের বিক্ষোভে সব জানতে পারলাম।’’
অভিভাবকদের প্রশ্ন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ আছে জেনেও কেন ওঁর বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা নেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ? সদুত্তর মেলেনি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে।