Teacher Crisis

ঘাটতি মেটাতে শহরের শিক্ষক বদলি গ্রামেও

এসএসসি সূত্রের খবর, কলকাতার কমবেশি ৫৮০ জন শিক্ষককে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলে প্রশাসনিক ভাবে বদলির সুপারিশপত্র তৈরি করা হয়েছে। সেই সুপারিশপত্র বিলি হবে শীঘ্রই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:০১
Share:

শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত ঠিক রাখতেই কলকাতার শিক্ষকদের এ বার জেলায় পাঠাচ্ছে এসএসসি। প্রতীকী ছবি।

শিক্ষক-স্রোত এত দিন ছিল শহরমুখী। এ বার স্রোত বিপরীত মুখে, কলকাতা থেকে গ্রামে। তফাত হল, প্রথমটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, কিন্তু দ্বিতীয়টা সরকারি নির্দেশের ভিত্তিতে গ্রামের স্কুলে বদলি। শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত ঠিক রাখতেই কলকাতার শিক্ষকদের এ বার জেলায় পাঠাচ্ছে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশন। এর পিছনে কলকাতা হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণও কাজ করছে বলে শিক্ষা ও আইন শিবিরের অভিমত। হাই কোর্ট বলেছে, প্রয়োজনে কলকাতা থেকে শিক্ষক পাঠিয়ে গ্রামাঞ্চলের স্কুলে শিক্ষক-ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

Advertisement

এসএসসি সূত্রের খবর, কলকাতার কমবেশি ৫৮০ জন শিক্ষককে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলে প্রশাসনিক ভাবে বদলির সুপারিশপত্র তৈরি করা হয়েছে। সেই সুপারিশপত্র বিলি হবে শীঘ্রই। পর্যায়ক্রমে কলকাতার আরও এক হাজার শিক্ষককে বিভিন্ন জেলায় বদলির প্রক্রিয়া শুরু হবে অচিরেই।

কিন্তু এমন বদলি নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনিক বদলির মাধ্যমে জোর করে কলকাতার শিক্ষকদের জেলায় পাঠানো কতটা যুক্তিসঙ্গত, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, ২০২১ সালের অগস্টে চালু করা উৎসশ্রী পোর্টালের ভুল নীতির দরুন শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিপর্যস্ত হয়ে যায়। তার এক বছরের মাথায় সেই পোর্টাল বন্ধ করে দেয় সরকার। শিক্ষকদের প্রশ্ন, উৎসশ্রী মারফত বদলি নিয়ে গ্রাম বা জেলা থেকে অনেকে নিজের শহরে সবে থিতু হতে শুরু করেছেন। আবার হঠাৎ কেন তাঁদের জোর করে গ্রামে পাঠানো হবে? গ্রাম থেকে কি নিজের শহরে ফেরার সুযোগ থাকবে তাঁদের?

Advertisement

শিক্ষক-সমস্যা কলকাতায় কম নেই। অভিযোগ, হিন্দু, বেথুন-সহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। পড়ুয়ারা স্কুলে বসে থাকছে, কিন্তু শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, শহর থেকে এত শিক্ষককে জেলায় বদলি করলে এই স্কুলগুলির কী হবে? শিক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির পরিব্যাপ্ত অভিযোগের ফলে কয়েক বছরে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। পাশ করে বসে আছেন হাজার হাজার শিক্ষকপদ প্রার্থী।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ক্ষেত্রে ঔচিত্য ও বাস্তবতায় ফারাক বিস্তর। বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের বক্তব্য, ৩০ জন পড়ুয়া-পিছু এক জন শিক্ষক থাকা উচিত। অথচ রাজ্যে চালু রীতি হল, একটি শ্রেণিতে ৪০ জন পড়ুয়া-পিছু এক জন শিক্ষক। রাজ্যের বেশির ভাগ স্কুলে, এমনকি শহরেরও অনেক স্কুলে এই অনুপাত বজায় থাকছে না। অভিযোগ, কলকাতার বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়া কম, শিক্ষক বেশি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘কলকাতার বাংলা স্কুলে ছাত্রছাত্রী কমছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের মধ্যেও ইংরেজি স্কুলে পড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। এই অবস্থায় অনেক স্কুলেই পড়ুয়া কম, শিক্ষক বেশি।’’

ঠিক উল্টো সমস্যা জেলার স্কুলে। সেখানে যে-সব স্কুলে পড়ুয়া বেশি, যেখানে সরকারি বা সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলই ছাত্রছাত্রীদের ভরসা, সেগুলি শিক্ষক-শূন্যতায় ভুগছে। অনেক স্কুলে বিভিন্ন বিষয়ে এক জনও শিক্ষক নেই। ফলে গ্রামের অসংখ্য স্কুলেও পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাত বজায় থাকছে না।

হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেছিলেন, যে-সব স্কুলে পড়ুয়া বেশি অথচ শিক্ষক কম, সেখানে শিক্ষক পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে বদলি নীতি তৈরি করতে হবে সরকারকে। উৎসশ্রীর মাধ্যমে বহু শিক্ষক শহরে চলে আসায় শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত যে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে, সেটা বুঝতে পেরে শিক্ষা দফতর ওই পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে। তাতেও যে সুরাহা হচ্ছে না, কলকাতার শিক্ষকদের গ্রামে বদলির উদ্যোগে সেটা পরিষ্কার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement