ছবি সংগৃহীত।
বিমানবন্দরের ধাঁচে আহার-বিশ্রামের পরিকাঠামো গড়ে দূরের বাসযাত্রাকে আরও আকর্ষক করে তুলতে চাইছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এসবিএসটিসি। জেলায় জেলায় গুরুত্বপূর্ণ বাসরুটে প্রধান সড়কের পাশে যাত্রীদের বিশ্রাম, আহার এবং অন্যান্য জরুরি প্রয়োজন মেটাতে বিশেষ ‘বাস হল্ট হাব’ তৈরি করছে তারা। সেখানে উন্নত মানের পার্কিং ব্যবস্থা, শৌচাগার, বিশ্রামের জায়গা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেস্তরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া, ওষুধের দোকানের মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
ওই হাবের জন্য সরকার কোনও জমি অধিগ্রহণ করছে না। বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তি-মালিকানাধীন জমিতে চুক্তির ভিত্তিতে হাব গড়া হবে। দরপত্রের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে বর্ধমানের পালসিট ও মঙ্গলকোট, মুর্শিদাবাদের ওমরপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে প্রকল্পের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর পালসিটে প্রথম বাস হল্ট হাবের শিলান্যাস হবে। ‘‘পালসিটে চার একর জমিতে ওই হাব গড়ে তোলা হচ্ছে,’’ বলেন এসবিএসটিসি-র ডিরেক্টর গোদালা কিরণকুমার। বীরভূমের সিউড়িতে এমন হাব তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও জমির বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এসবিএসটিসি সূত্রের খবর, সময়ানুবর্তিতার সুবাদে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই তাদের দূরের বাসের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু দীর্ঘ বাসযাত্রার ধকল সইতে না-পারায় এবং যাত্রাপথে উন্নত মানের শৌচাগার, খাবার ও পানীয় জলের পরিকাঠামোর অভাবে শিশু, মহিলা ও বয়স্কদের একাংশ বাস পরিষেবা এড়িয়ে চলছেন। করোনা আবহে অনেক যাত্রী বাড়তি টাকা খরচ করে গাড়িতে সফর করছেন। এই পরিস্থিতি বদলাতে এবং সব ধরনের যাত্রীকে বাসযাত্রায় আকৃষ্ট করতে বিশেষ হাব তৈরির কথা ভাবা হয়েছে। উন্নত শৌচাগার ছাড়াও বাসযাত্রীদের জন্য হাবে বসার আধুনিক আরামপ্রদ ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেস্তরাঁ তৈরি করা হবে। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ওষুধ এবং অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থাও থাকবে। বাসের চালক-কর্মীদের জন্য বিশ্রামের পৃথক ব্যবস্থা ছাড়াও থাকবে বাস ও গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের বন্দোবস্ত। প্রাথমিক ভাবে দুই একর জমিতে প্রকল্প রূপায়ণের ভাবনা থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে আরও বেশি জমি মিলেছে। নিগমের চেয়ারম্যান দীপ্তাংশু চৌধুরী বলেন, ‘‘জীবাণুমুক্ত আধুনিক শৌচাগার, উন্নত পরিবেশে আহার-বিশ্রামের সুযোগ পেলে বাসযাত্রীদের দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি লাঘব হবে। বাসযাত্রার আকর্ষণ বাড়বে সব ধরনের যাত্রীর কাছেই।’’
নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জাতীয় এবং রাজ্য সড়কের ধারে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে হাব প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। জমির মালিকের সঙ্গে ৩০ বছরের চুক্তি হবে। নিগমের চাহিদা অনুযায়ী পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে জমি-মালিককে। হাবের নকশার অনুমোদনও নিতে হবে নিগমের কাছ থেকে। নির্মাণে নির্ধারিত মান রক্ষা করা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করবে নিগম। হাব চালু হলে বছরে তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা সরকারকে দিতে হবে। সরকারি বাস-সহ বিভিন্ন যানবাহন ওই হাব ব্যবহার করলে বিভিন্ন পরিষেবা থেকে আয় হবে বেসরকারি সংস্থার। যাবতীয় পরিষেবার গুণমানের উপরে বিশেষ ভাবে নজর রাখবে এসবিএসটিসি।