জহর সরকার এবং সৌগত রায়। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জহর সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন সে কথা। এ নিয়ে তাঁকে বিঁধলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। জহরকে ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ বলে কটাক্ষ করে তাঁকে টিকিট দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সৌগতের কথায়, ‘‘এই ধরনের মানুষদের মনোনয়ন দেওয়াই ঠিক নয়।’’ ঘটনাচক্রে, শনিবারই তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছিল দলীয় সাংসদ দেব ও দলের নেতা কুণাল ঘোষের প্রকাশ্যে বাদানুবাদ। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার জহরের ইস্তফা ঘিরে তোলপাড় শাসক শিবিরের অন্দরমহল।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে সুর চড়িয়ে আগেই দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। সেই ধারাবাহিকতা বজায়ও রেখেছেন। কিন্তু এই প্রথম শাসকদলের কোনও সাংসদ ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। শুধু সাংসদ পদ ছাড়াই নয়, রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জহর। মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে লেখা চিঠিতে জহর বলেছেন, ‘‘আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এককথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’ এর পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও চিঠিতে সরব হয়েছেন জহর।
এ নিয়ে জহরকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন সৌগত। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘দলের প্রতি কোনও কমিটমেন্ট (দায়বদ্ধতা) নেই। পাবলিকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। ভাল কাজ করবেন ভেবে অন্য ক্ষেত্রের অনেককেই নিয়ে আসেন আমাদের নেত্রী। কিন্তু এঁদের কেউ কেউ ব্যক্তিকেন্দ্রিক। শুধু নিজেরটা ভাবেন। কোনও বিরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলেই পালাতে চান আর দলকে অস্বস্তিতে ফেলেন।’’
ঘটনাচক্রে, মমতাকে লেখা চিঠিতে নাম না করে সৌগতের প্রসঙ্গও টেনেছেন জহর। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, সংসদে নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের ‘স্বৈরাচারী ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির’ বিরুদ্ধে লড়তেই সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (পার্থ চট্টোপাধ্যায়)-র বিরুদ্ধে যে সব দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল, তাতে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু তখন দলের অনেক নেতা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন বলেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জহর। প্রসঙ্গত, শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় পার্থ এবং তার কিছু দিন পরেই গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরেই দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন জহর। দলের এক দিক পচে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বাড়ির লোকেরা ও বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়তে বলেছেন বলেও দাবি করেছিলেন। সেই সময় জহরের বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়িয়েছিলেন তৃণমূলের আর এক প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘জহর সরকার কোনও দিন তৃণমূলের মিছিলে হাঁটেননি। ওঁকে সবচেয়ে লোভনীয় পদ রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল দল। তিনি কিনা দলের ভিতরে না বলে প্রকাশ্যে দলবিরোধী কথা বলে দিলেন! এটা খুবই লজ্জার কথা। ওঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ সেই সৌগত তোপ দাগলেন জহরের বিরুদ্ধে।