নওশাদ সিদ্দিকী এবং সওকাত মোল্লা। —ফাইল চিত্র।
এত দিন এই তল্লাটে দাপট দেখিয়েছেন তৃণমূলের আরাবুল ইসলাম বা সওকাত মোল্লা। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম দেখা গেল, তাঁদের সঙ্গে কৌশলে সমানে টক্কর দিতে শুরু করেছে আইএসএফ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই ব্যাপারে যাবতীয় ‘কৃতিত্ব’ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর।
গত তিন দিন ধরে মনোনয়ন জমাকে ঘিরে বার বারই উত্তপ্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ১ এবং ২ ব্লক। মাত্র দু’বছর আগে রাজনৈতিক দল গড়ে ভোটে প্রার্থী দিয়েছিল আইএসএফ। সেই ভোটেই তারা জিতে নেয় ভাঙড় আসনটি।
সে বারে তৃণমূলের খারাপ ফলের পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছিল নানা মহলে। ফলে টক্করটা সমানে সমানে হয়েছিল কি না, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তবে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের সঙ্গে যে ভাবে লড়ে যাচ্ছে নওশাদের দল, তা বিস্মিত করছে রাজনৈতিক মহলকে। তলায় তলায় কতটা সংগঠিত হয়েছে আইএসএফ, কতটা শক্তি সংগ্রহ করেছে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
মনোনয়ন জমা শুরু হওয়ার পরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল গোলমাল। সে দিন ভাঙড়-২ ব্লকে তৃণমূলের লোকজন জড়ো হয়ে আইএসএফকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় পনেরো হাজার লোক জড়ো করে তৃণমূলকে হটিয়ে দেয় আইএসএফ। দু’পক্ষের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াইও চলে। তৃণমূলের বেশ কয়েক জন জখম হন। বুধবার মনোনয়ন ঘিরে ফের অশান্ত হয় এলাকা। সে দিন ভাঙড়-১ ব্লকে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে দু’পক্ষের। সেখানও তৃণমূলকে যথেষ্ট চাপে ফেলেছিল আইএসএফ।
বৃহস্পতিবার সকালে, প্রাথমিক ভাবে ভাঙড়-২ ব্লক অফিসের পুরো দখল নেয় তৃণমূল। অফিসে ঢোকার মুখে চারটি রাস্তাই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সকাল থেকে টানা বোমা-গুলি চলেছে। তবে বেলা ২টোর পর থেকে মাঠের পথ ধরে হাজার হাজার আইএসএফ কর্মী তৃণমূলের লোকজনের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সেই সময়ে আইএসএফের সামনে পিছু হটতে হয় তৃণমূলকে। বেলা ৩টেয় তৃণমূলের মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হলে যখন তারা ব্লক অফিস চত্বর খালি করছিল, তখন আইএসএফের লোকজন এসে তাদের মেরেধরে হটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বিকেলের পর থেকে ব্লক অফিস চত্বর পুরোপুরি আইএসএফের দখলে চলে যায়।
কী ভাবে এত শক্তি পেল আইএসএফ?
নওশাদ সিদ্দিকী এ দিন এলাকার ধারেকাছে আসেননি। তিনি ছিলেন মাঝেরআইটে নিজের অফিসে। নওশাদ পরে বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় মানুষের উপরে অত্যাচার করেছে তৃণমূল। তাই মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন। এই সন্ত্রাস দেখে তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। তাঁরা আইএসএফের পাশে আসেন।’’
গত তিন দিন গোলমালের সময়ে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম, তাঁর ছেলে হাকিমুল, ভাঙড়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক সওকাত মোল্লাদের দেখা গিয়েছে। এর আগে আরাবুলের গাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। বৃহস্পতিবার সওকাতকে এলাকায় দেখা না গেলেও আরাবুল-হাকিমুলেরা ছিলেন ব্লক অফিস চত্বরে।
সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘যারা সিপিএমের হার্মাদ, তারা আইএসএফের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। আমাদের কাছে খবর ছিল না, এত অস্ত্রশস্ত্র ওরা জড়ো করেছে।’’ আরাবুল ফোন ধরেননি।