(বাঁ দিকে) সন্দীপ ঘোষ। অভিজিৎ মণ্ডল (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় শুক্রবার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে পারল না সিবিআই। যার ফলে জামিন পেয়ে গেলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন এবং ধর্ষণের মামলায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। ২০০০ টাকা বন্ডের বিনিময়ে জামিন পেয়েছেন সন্দীপ এবং অভিজিৎ।
জামিন পেলেও এখনই জেল থেকে বেরোতে পারবেন না সন্দীপ। আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে আগেই গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। ওই মামলায় এখনও জামিন পাননি তিনি। অভিজিতের বিরুদ্ধে অবশ্য অন্য কোনও মামলা নেই। তাই তিনি জেল থেকে বার হতে পারবেন। তবে যখন থানায় ডাকা হবে, তখনই হাজিরা দিতে হবে তাঁকে।
শুক্রবার সিবিআই আদালতে ছিল আরজি করে খুন এবং ধর্ষণের মামলার শুনানি। এই মামলায় একটি চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। শুক্রবার সন্দীপ এবং অভিজিতের গ্রেফতারির ৯০ দিনের মাথায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। আদালতে সিবিআই জানায়, এই মামলায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ধৃত সন্দীপ এবং অভিজিতের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ। তারা চার্জশিট দিচ্ছে না। তাই আদালতকে আইন মেনে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে বলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। এর পরেই অভিযুক্তদের আইনজীবী সওয়াল করে জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলরা ৯০ দিনের বেশি সময় ধরে হেফাজতে রয়েছেন। তাই তাঁদের জামিন দেওয়া হোক। সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার (আইও) জানিয়েছেন, এই মামলার তদন্ত চলছে। তাই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে না। এর পরেই সিবিআই আদালতের বিচারক জামিন দেন সন্দীপ এবং অভিজিৎকে।
সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেব। জামিন হয়ে গিয়েছে বলে তদন্ত শেষ, এমনটা নয়। দ্রুত গতিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হলে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেব। এখন সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই বলেই শুক্রবার তা দিয়ে উঠতে পারিনি।’’
অভিজিতের আইনজীবী মহম্মদ সাজিদ বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। গ্রেফতারির পরে ৯০ দিন হয়ে গিয়েছে, সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়নি। সিবিআই বার বার বলছে, এখনও তদন্ত চলছে। তার অর্থ, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও প্রমাণ মেলেনি।’’ তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার জেল থেকে বেরিয়ে যাবেন অভিজিৎ।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসকের দেহ। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে কলকাতা পুলিশের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। ওই ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় সন্দীপ এবং অভিজিৎকে। যদিও আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপকে আগেই হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে তাঁদের গ্রেফতারের পরে সিবিআই আদালতে দাবি করেছিল, আরজি করে দেহ উদ্ধারের দিন বেশ কয়েক বার ফোনে কথা বলেছিলেন সন্দীপ এবং অভিজিৎ। তাঁদের ফোন থেকে কিছু ‘তদন্তসাপেক্ষ’ ভিডিয়ো পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার আরও দাবি, ঘটনা চাপা দিতে ধৃতদের মোবাইল থেকে বেশ কিছু ফোনকলও করা হয়েছিল। কয়েক জন সাক্ষীকে ফোন করেছিলেন তাঁরা। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চেয়ে দু’জনের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁদের গ্রেফতারির ৯০ দিনের মাথায় শুক্রবার সিবিআই আদালতে জানাল, আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় এই মুহূর্তে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে পারছে না তারা। তদন্ত চলছে। তার পরেই এই মামলায় জামিন পেলেন সন্দীপ এবং অভিজিৎ।