মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ক্রিকেট মাঠে বিরাট কোহলির বীরগাথার উদাহরণ এ বার উঠে এল রাজনীতির ময়দানে! দলকে লড়াই সংগ্রামের বার্তা দিতে কোহলির দৃষ্টান্ত টানলেন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায় এল ফুটবলের ‘ম্যান মার্কিং’-এর প্রসঙ্গ। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলকে প্রস্তুত করতে খেলার জগতের উপমা এনে বুথে বুথে লড়াইয়েরই ডাক শোনা গেল সিপিএমের নেতা-নেত্রীদের গলায়।
সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন শেষে মঙ্গলবার ডানকুনি স্পোর্টিংয়ের ফুটবল মাঠে ছিল সমাবেশ। ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতোই। এক সময়ে সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষকে পুলিশের তরফে অনুরোধ করা হয় মাঠমুখী জনতাকে আর এগোতে নিরস্ত করার জন্য! এর আগেও ব্রিগেড-সহ নানা সমাবেশে ময়দান উপচে লোক এনেছে সিপিএম। কিন্তু ভোটে তার প্রতিফলন হয়নি। এ বার তাই বুথের লড়াইয়ের কথা আরও বেশি করে বলেছেন সিপিএমের নেতৃত্ব। ডিওয়াউএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মনে করিয়ে দিয়েছেন, টি-২০ নয়, টেস্ট ম্যাচের মতো করে খেলতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে ম্যাচ বার করতে হবে!
রাজ্য সম্মেলনের পরে সিপিএমের সমাবেশ। —নিজস্ব চিত্র।
সমাবেশে মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘দু’দিন আগে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ সবাই দেখেছেন। বিরাট কোহলির ব্যাটিং দেখেছেন। সেখান থেকে বোঝা যায়, ‘ফর্ম’ সাময়িক কিন্তু ‘ক্লাস’স্থায়ী।’’ সিপিএমের এ বারের রাজ্য সম্মেলনের মূল বার্তা, নিজেদের ‘ক্লাস’ অর্থাৎ শ্রেণি ভিত্তির কাছে ফিরে যাও। ‘ক্লাস’-এর প্রসঙ্গ এনে মীনাক্ষী কৌশলে সেই কথাই বলেছেন এবং একই সঙ্গে ভোটের ফলে হতাশ হতে বারণ করেছেন, এমনই ব্যাখ্যা দলীয় সূত্রের। সম্মেলনে দ্বিতীয় বারের জন্য নির্বাচিত রাজ্য সম্পাদক সেলিম সমাবেশে বলেছেন, ‘‘এই ২৬ থেকেই (আজ, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি) ২০২৬ সালের জন্য লড়াই শুরু হবে। সেই লড়াইয়ে কোথাও দাঁড়ি, কমা, ফুলস্টপ থাকবে না। ম্যান মার্কিং থাকবে!’’ পরে এই প্রসঙ্গে সেলিমের ব্যাখ্যা, ‘‘সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে, চিরাচরিত পন্থার পাশাপাশি সৃজনশীল পদ্ধতিতে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রতিটি পঞ্চায়েত, পুরসভা ধরে ধরে মানুষের কাছে যেতে হবে। সেটাই আমাদের ‘ম্যান মার্কিং’। বাইরের কোনও সংস্থাকে নিয়ে নয়, পেশাদারি পদ্ধতি ও মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করব।’’ এর জন্য দলের নেতা-কর্মীদের বাছাই করে প্রশিক্ষিত করা হবে বলেও রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন।
মঞ্চে দেবলীনা হেমব্রম ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ডানকুনিতে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে ‘অপরাধীদের সরকারে’র বিরোধিতার পাশাপাশি আরএসএস-বিজেপির বিভাজনের নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত, অপরাধীদের যে সরকার রাজ্যে চলছে, আগামী দিনে তার বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। তার পাশাপাশি দ্বিতীয় বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের বিষ ঢালছে আরএসএস-বিজেপি। বিভাজনের পরিকল্পনার জন্যই সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত বাংলায় ১০ দিন কাটিয়ে গিয়েছেন। এই দুই শক্তির বিকল্প দিতে হবে বামপন্থীদের।’’ আর চাঁছাছোলা ভঙ্গিতে সিপিএমের জনজাতি নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম বলেছেন, লাল পতাকা দূর্বা ঘাসের মতো। পিষে দিলেও সে আবার গজিয়ে ওঠে!
সূত্রের খবর, সমাবেশের আগে রাজ্য সম্মেলনের জবাবি ভাষণে সেলিম স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নাছোড়বান্দা ভঙ্গিতে এবং শেষ দেখার লক্ষ্যে এ বার আন্দোলন চালাতে হবে। শুধু দাবিপত্র জমা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করার দিন শেষ!