মমতার সফরের আগেই কৃষ্ণেন্দুকে রাখি সাবিত্রীর

অন্য দিন যুযুধান। রাখির দিন সৌজন্য। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে মালদহে বারবার যাঁরা খবরের শিরোনামে আসেন, তাঁদের ঘিরেই সম্পূর্ণ অন্য দৃশ্য দেখা গেল রবিবার। জেলার দুই তৃণমূল নেতা-নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্র বিবাদ শিকেয় তুলে রাখলেন। সাবিত্রীদেবী রাখি পরালেন কৃষ্ণেন্দুবাবুর হাতে। কৃষ্ণেন্দুবাবুও প্রণাম করলেন তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

আড়ি থেকে ভাব, নাকি মুখ্যমন্ত্রীর মালদহ সফরের আগে সৌজন্যবার্তা? কৃষ্ণেন্দুর হাতে রবিবার রাখি পরিয়ে এই প্রশ্নগুলিই উস্কে দিলেন জেলা রাজনীতিতে তাঁর বিরোধী হিসেবেই পরিচিত সাবিত্রী। নিজস্ব চিত্র

অন্য দিন যুযুধান। রাখির দিন সৌজন্য।

Advertisement

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে মালদহে বারবার যাঁরা খবরের শিরোনামে আসেন, তাঁদের ঘিরেই সম্পূর্ণ অন্য দৃশ্য দেখা গেল রবিবার। জেলার দুই তৃণমূল নেতা-নেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্র বিবাদ শিকেয় তুলে রাখলেন। সাবিত্রীদেবী রাখি পরালেন কৃষ্ণেন্দুবাবুর হাতে। কৃষ্ণেন্দুবাবুও প্রণাম করলেন তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার ঠিক আগেই দুই বিবদমান নেতা-নেত্রীর এমন সৌহার্দ্যের সাক্ষী থাকল মালদহ।

শেষ বার মালদহ ছাড়ার ঠিক আগে মমতা বলে গিয়েছিলেন ‘এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ’ করতে। তার পরেও রাজ্য মন্ত্রিসভা এবং দলীয় বৈঠকে দুই মন্ত্রীকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবু বারবারই তাঁদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে সাবিত্রীদেবীকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করে দিয়েছেন মমতা। কৃষ্ণেন্দুবাবুকে পর্যটন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর। তার পরেও গোষ্ঠীকোন্দল থামেনি। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেও ইংরেজবাজারের সদরঘাটে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শাসক দলের এই দুই গোষ্ঠী। জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুতীর্থ সাহা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন। ঘটনার পরে তৃণমূল নেতা সুব্রত দাস-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় সুতীর্থকে মারধর করার অভিযোগ দায়ের হয়। সুব্রতর পরিবার আবার তখন জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অম্লান ভাদুড়ির বিরুদ্ধে তাঁকে মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে। জেলা তৃণমূলের অন্দরে সুতীর্থবাবু ও অম্লানবাবু সাবিত্রীদেবীর অনুগামী বলে পরিচিত। যেখানে সুব্রত পরিচিত কৃষ্ণেন্দুবাবুর অনুগামী বলে।

Advertisement

এত কিছুর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ফের মালদহে আসছেন সোমবার। তবে কি সেই কারণেই যুযুধান দুই নেতা-নেত্রী প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে সৌজন্যের পরিচয় দিলেন? তৃণমূলেরই এক নেতা এমনটাই স্বীকার করছেন। কিন্তু সাবিত্রীদেবীর বক্তব্য, “আমি সবাইকেই রাখি পরিয়েছি। কৃষ্ণেন্দু আমার ভাইয়ের মতো। তাকেও পরিয়েছি। এর মধ্যে রাজনীতি নেই।” আর কৃষ্ণেন্দুবাবুর দাবি, “আমাদের তো কোনও মতবিরোধ নেই।” তিনি জানান, কিছু কারণে সুস্থ বিতর্ক হয়েছে। “আমরা একটা পরিবার। পরিবারের মধ্যে বিতর্ক থাকতেই পারে।”

রবিবার দুপুর একটা নাগাদ মালদহ শহরের কালীতলার তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে সাবিত্রীদেবীর দুধ সাদা রঙের গাড়িটা থামতেই কর্মীদের মধ্যে শুরু হয় জল্পনা। এই কালীতলার পার্টি অফিসেই বসে দলের কাজ সামলান কৃষ্ণেন্দুবাবু। সে সময় অবশ্য কৃষ্ণেন্দুবাবু পার্টি অফিসে ছিলেন না। ধান, দূর্বা, প্রদীপের থালা হাতে পার্টি অফিসে ঢুকে পড়েন সাবিত্রীদেবী। তখন কর্মীদের ফোন পেয়ে পার্টি অফিসে চলে আসেন কৃষ্ণেন্দুবাবুও। তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেন সাবিত্রীদেবী। পায়ে হাত দিয়ে সাবিত্রীদেবীকে প্রমাণ করে আশীর্বাদ চান কৃষ্ণেন্দুবাবুও। ‘আরও বড় হও’ বলে আশীর্বাদ করে কৃষ্ণেন্দুবাবুকে তাঁর প্রিয় পোশাকও উপহার দেন সাবিত্রীদেবী। রাখি পরানোর জন্য সকাল থেকে তিনি উপোস করে ছিলেন।

এই ঘটনায় তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রতিক্রিয়া, “এটাই তো চাই। দলনেত্রীও এটাই চেয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের প্রত্যেকটি নেতা কর্মী মিলেমিশে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করুক। রাখিবন্ধন সেই শুভক্ষণ এনে দিয়েছে।” তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি মৌসম বেনজির নুরের বক্তব্য, “এখন তৃণমূলের এক নেত্রী এক নেতাকে রাখি পরাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের গোষ্ঠীকোন্দলের ফলে তৃণমূলের বাইরের অনেক মানুষও বারবার সমস্যায় পড়েছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement