অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে ইতাহাসবিদ ইরফান হাবিবের সঙ্গে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে পড়ে প্রকাশ্যে বিবাদের মাত্র দিন কয়েকের মাথাতেই একই মঞ্চে দেখা গেল মালদহের দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে। রবিবার মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ৭৬তম জাতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের সূচনা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কোনও কথা বলেননি।
২৪ ডিসেম্বর মালদহ কলেজ অডিটেরিয়ামে সরকারি পাট্টা বিলিকে কেন্দ্র করে দুই মন্ত্রীর মধ্যে প্রকাশ্যে বচসা শুরু হয়। একে অপরের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বচসাও করেন। মুখ্যমন্ত্রী দুই মন্ত্রীর প্রতিই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দু’জনকে সাবধান হওয়ারও বার্তা দেন তিনি। এরপরেই চাপে পড়ে যান সাবিত্রীদেবী ও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণবাবু। পরিস্থিতি সামাল দিতেই এ দিন দুই মন্ত্রী এক মঞ্চে উঠলেন বলে মনে করছেন দলের একংশ নেতৃত্ব। দু’জন এক মঞ্চে প্রায় তিরিশ মিনিট বসেছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠান চলাকালীন মঞ্চ ছাড়েন সাবিত্রীদেবী।
তবে এক সঙ্গে মঞ্চে থাকা নিয়ে কিছু বলতে চাননি কৃষ্ণেন্দুনারায়ণবাবু ও সাবিত্রীদেবী। দু’জনেই ইতিহাসবিদদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে খুশি বলে জানিয়েছেন। কৃষ্ণেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘আশা করছি ইতিহাস কংগ্রেসে জেলার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হবে। এমন অনুষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ একই সুরে সাবিত্রীদেবী বলেন, ‘‘এখানে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হবে না।’’
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে ৭৬ তম জাতীয় ইতিহাস কংগ্রেস। দেশের নানা প্রান্তে ইতিহাস কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইতিহাস কংগ্রেস হয়েছিল। এ বারের ইতিহাস কংগ্রেসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজির ছিলেন ইতিহাসবিদেরা। উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব, জাতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের সম্পাদক ইসরাৎ আলম, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপাল মিশ্র সহ প্রমুখ।
এ দিন প্রায় ১১০০ জন গবেষক তাঁদের গবেষণাপত্র জমা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। অনুষ্ঠান শুরুর পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। তিনি বলেন, এখানে উপস্থিত গবেষকেরা তাঁদের গবেষণা পত্র পেশ করবেন। সকলেই যাতে সফল হন তার জন্য আগাম শুভেচ্ছা। উপাচার্য গোপালবাবু বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই নিয়ে দু’বার জাতীয় ইতিহাস কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হল। ইতিহাস কংগ্রেসের ফলে জেলার ইতিহাসবিদদের অনেক সুবিধে হবে। জেলার নানা জানা অজানা সব ইতিহাস উঠে আসবে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।’’
সম্প্রতি সাবিত্রীদেবী ও কৃষ্ণেন্দুবাবুকে এক মঞ্চে দেখাই যেত না। এক জন এলে আর এক জন দেরি করে আসতেন। এক জন আসছেন শুনলে অন্য জন বেরিয়ে যেতেন। ২৪ ডিসেম্বর মালদহ কলেজ অডিটেরিয়ামে সরকারি পাট্টাবিলিকে কেন্দ্র করে দুই মন্ত্রী এক সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রকাশ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। তারপরে এ দিন ইতিহাস কংগ্রেসের মঞ্চ পরস্পরকে এক মঞ্চে নিয়ে এল।