—ফাইল চিত্র।
হাসপাতাল আর কসাইখানা এক নয়। ব্যবসা করতে এলেও সে কথাটা ভুললে চলবে না। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে হুঁশিয়ারি দিতে সোমবার ফের এ কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, হাসপাতালের সঙ্গে প্রোমোটিং-এর ব্যবসাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। পাঁচ দিনের ব্যবধানে এই নিয়ে দু’বার বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। জানালেন, তিনি চান, বেসরকারি হাসপাতালের রোগী শোষণের বিরুদ্ধে এ রাজ্যের সরকার যে ভাবে গর্জে উঠেছে, তা মডেল হয়ে উঠুক গোটা দেশে।
রাজারহাটে শঙ্কর নেত্রালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন ছিল এ দিন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই জানিয়ে দেন, এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনও তাঁর কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘সবাই খারাপ নয়। আবার সবাই ভাল-ও নয়। কিছু মানুষ আছে যারা মুখে ‘গু়ডি-গুডি’ ব্যবহার করে। কিন্তু মানুষের জন্য এত টুকুও ভাবে না। তাদের কাছে ব্যবসাটাই প্রধান। এটা আমরা সহ্য করব না। সাধারণ মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে তাঁরাও এটা সহ্য করবেন না।’’
বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে এ দিন গোড়াতেই তিনি বলেন, ‘‘আমি আপনাদের কারও শত্রু নই। যদি আমার কথাগুলো রূঢ় লাগে, তা হলে ক্ষমা করবেন। কিন্তু এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’
আরও খবর
সাত বছরের মেয়ের উপর যৌন অত্যাচার চালাত স্কুলেরই দুই দিদি!
সরকার যে রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয়, তা এ দিন একাধিক বার বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। যে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে, তাদের প্রতি তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা হয়েছে তা হয়েছে। নতুন করে শুরু করুন। সাত-দশ দিন সময় নিয়ে ভাবুন। নিজেরা বৈঠক করুন। ভাবুন, সামান্য জ্বর হয়েছে, তাও মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরীক্ষা কেন করা হবে? আর যার চিকিৎসার বিল মেটানোর ক্ষমতা নেই, তাকে দয়া করে ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ বা বাড়ির দলিল জমা রেখে যেতে বলবেন না।’’ তিনি পরামর্শ দেন, হাসপাতালের রিসেপশনের কর্মীদের বলুন কেউ অভিযোগ জমা দিতে এলে যেন সেটা মন দিয়ে শোনা হয়। এক জন নোডাল অফিসার রাখুন, যাতে তিনি সব অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারেন। ফেয়ার প্রাইস মেডিসিন শপ, ফেয়ার প্রাইস ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলুন।’’ যাঁরা সরকারের কথা শুনে চলবে, ন্যায্য খরচে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে, তাদের দিকে সরকারও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবে বলে এ দিন ঘোষণা করেন তিনি।
কিন্তু ঝাঁ চকচকে হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণেরই যা খরচ, সেখানে চিকিৎসার খরচ কম হবে কী ভাবে? মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, যেমন পাঁচ তারা, সাত তারা হোটেল থাকে, তেমন বাজেট হোটেলও তো থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে যাঁদের ক্ষমতা আছে তাঁরা বড় ঘরে থাকুন। কিন্তু যাঁদের ক্ষমতা নেই, তাঁদের জন্য এক চিলতে ঘরের ব্যবস্থাও থাকুক। শুধু আশ্বাস দিতে হবে, দু’জায়গাতেই চিকিৎসার মানটা যেন এক হয়। বড়লোকের এক রকমের চিকিৎসা, আর গরিবের অন্য রকম, এটা হতে দেওয়া যায় না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, চিকিৎসকেরা সকলে খারাপ নন, সব বেসরকারি হাসপাতালও খারাপ নয়। কিন্তু কেন কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রতি মাসে কতগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা, কতগুলো অস্ত্রোপচার করা হবে তার টার্গেট দেওয়া হবে? কেন হাসপাতালের যন্ত্রগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটা নিয়মিত যাচাই করা হবে না? কোনও বিশেষ হাসপাতালের নাম না করে তিনি বলেন, ‘‘ভেন্টিলেশনে রোগী মারা গেছেন। তাও তাঁর অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এবং সেটা রাতে। যাতে চার্জ দ্বিগুণ হয়। এটা কি চলতে দেওয়া যায়?’’
আরও খবর
‘সতীর্থ খেলোয়াড়ের চেষ্টাতে বার্কোভেকের মতো আমিও সে বার বেঁচে গিয়েছিলাম’
তিনি জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলির ব্যবসায় সরকার হস্তক্ষেপ করতে চায় না। বরং সরকার সাহায্যের হাতই বাড়াতে চায়। কিন্তু হাসপাতালগুলিকেও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা গরিব মানুষকে ঘটিবাটি বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে বাধ্য করবে না।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রবিবার রাতে তাঁর কাছে একটি মেয়ে এসেছিল। তার মা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি। মেয়েটি তাঁকে জানায়, বিপুল টাকা বিল হয়েছে। তারা আর টানতে পারছে না। মা-কে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হচ্ছে। তাতে খরচ আরও বাড়বে। অথচ সেই ক্ষমতাই নেই তাদের। তিনি বলেন, ‘‘আমি সঙ্গে সঙ্গে অরূপ বিশ্বাসকে বলে এসএসকেএমে একটি শয্যার ব্যবস্থা করি। ভোর পাঁচটায় ওর মা-কে আনার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তত ক্ষণে আর বিশেষ কিছু করার নেই।’’
শুধু কলকাতা নয়, জেলার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকেও এ দিন সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। জেলার ক্ষেত্রেও যে সরকার কোনও রকম ঢিলেঢালা মনোভাব দেখাচ্ছে না, তা এ দিন স্পষ্ট হয় তাঁর কথায়। বর্ধমানের ওই নার্সিংহোমকে পিজি নার্সিংহোম নাম রাখার অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল, সেটাও তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।