সফল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অশান্তিতে দোষারোপ শাসককেই

তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াতে এসেছিলেন প্রথম মহিলা শিক্ষক কাজল সেনগুপ্ত। ইংরেজির শিক্ষিকা কাজলদেবী কেমন পড়াচ্ছেন, তা আড়ি পেতে শুনতেন তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

ফাইল চিত্র।

দেশের সফল, অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারী, অবিমৃশ্যকারী সিদ্ধান্তের বীজ উস্কে দিয়ে, বাড়িয়ে তুলে শাসক শ্রেণিই অশান্তির সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুললেন অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, প্রতিষ্ঠানগুলিকে এ ভাবে সারস্বত ক্ষতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের সম্পর্কে জনমানসে বিরূপ মনোভাব তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রবণতা রাজ্য ও কেন্দ্র— সর্বত্রই।

Advertisement

শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা) আয়োজিত দিব্যেন্দু পাল স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই অভিযোগ করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্তবাবু।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রশাসনের গুরুত্ব’ বিষয়ে বলতে গিয়ে সুকান্তবাবু দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে এই অভিযোগ করেন। তাঁর মতে, অন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, দুর্নীতি, ভাঙচুর, অনাচার, অপশাসনের ক্ষেত্রে অবশ্য শাসকের মনোভাব সম্পূর্ণ অন্য রকম। সে-সব ক্ষেত্রে ঘটনাকে ছোট করে দেখানো, সাফাই গাওয়া, ঘটনার অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়। অথচ শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি বলেন, ‘‘বাক্‌স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। অথচ স্বৈরাচারী শাসক এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে জনবিরোধী বলে ধিক্কার দেয়। অন্য দিকে এই প্রতিষ্ঠানগুলি নিযে চিন্তায় থাকে এবং এদের দমনের চেষ্টা করে।’’

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ‘ইচ্ছা’য় যাদবপুরের কলা বিভাগে প্রবেশিকা স্থগিত রাখার বিতর্ক শুরু হলে সুকান্তবাবু জোরদার প্রতিবাদ জানান। এ দিন তিনি জানান, স্বাধিকার রক্ষায় প্রতিপক্ষের অস্ত্র দিয়ে লড়াই নয়। শিক্ষকদের নিজেদের নীতি ও যুক্তি দিয়েই লড়তে হবে। বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করায় দেশ জুড়েই যে অধ্যাপকদের শাসকের রোষে পড়তে হচ্ছে, তার উল্লেখ করেন তিনি।

কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে সুকান্তবাবু জানান, বিদেশের যে-সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমান হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে সেই টাকা কী ভাবে খরচ হচ্ছে, তা নিয়ে খবরদারি করা হয় না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষকদের হাজিরা এবং শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিরোধিতা করেন তিনি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে নজরদারির বিরোধিতা করে নিজের ছাত্রাবস্থার একটি গল্প শোনালেন সুকান্তবাবু। তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াতে এসেছিলেন প্রথম মহিলা শিক্ষক কাজল সেনগুপ্ত। ইংরেজির শিক্ষিকা কাজলদেবী কেমন পড়াচ্ছেন, তা আড়ি পেতে শুনতেন তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান। কাজলদেবী ক্লাসের পার্টিশনের তলা দিয়ে বিভাগীয় প্রধানের পদযুগল এবং কোঁচানো ধুতি দেখতে পেতেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement