ডেপুটি মেয়র পদে বসবেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই তথা ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী অভিজিৎ ঘটক। অন্যজন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী ওয়াসিমুল হক। তাঁদের ডেপুটি মেয়র পদে বসা নিশ্চিত করতে আসানসোল পুরসভা আইন সংশোধনী পাশ করাতে চায় শাসকদল।
আসানসোলের দুই ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক। নিজস্ব চিত্র
আসানসোলের রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করতে জোড়া ডেপুটি মেয়রের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। এই পদে বসবেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই তথা ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী অভিজিৎ ঘটক। অন্যজন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী ওয়াসিমুল হক। তাঁদের ডেপুটি মেয়র পদে বসা নিশ্চিত করতে আসানসোল পুরসভা আইন সংশোধনী পাশ করাতে চায় শাসকদল। আগামী ৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই পাশ করানো হতে পারেন আসানসোল পুরসভা সংশোধনী আইন।
শনিবারই এ বিষয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আসানসোল পুরসভার আইনে দু’টি ডেপুটি মেয়র পদের উল্লেখ নেই। তাই বিধানসভায় সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে তাঁদের ডেপুটি মেয়র পদে বসানোর পথ প্রশস্ত করা হবে।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জোড়া ডেপুটি মেয়রের পিছনে রয়েছে আসানসোল তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। আসানসোলের মেয়র হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন আটবারের কাউন্সিলর অমর চট্টোপাধ্যায়। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী এই তৃণমূল নেতাকে চেয়ারম্যান পদ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এছাড়া আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা আইন মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই প্রাক্তন মেয়র পারিষদ অভিজিৎ। সঙ্গে কুলটি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমানে শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা অশোক রুদ্রের নামও ভেসে উঠেছিল মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে। অমিতাভ বসু ও তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও মেয়র পদের দৌড়ে ছিল। মন্ত্রীর ভাইয়ের হয়ে আবার আসানসোলের তিনজন বিধায়ক ও কয়েকজন নবনির্বাচিত কাউন্সিলরও পৃথকভাবে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি লিখে মেয়র করার আবেদন জানিয়েছিলেন। মেয়র পদের এত দাবিদার দেখেই ভোটে না লড়া বিধান উপাধ্যায়কেই মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সঙ্গে আসানসোলের ভারসাম্যের রাজনীতি বজায় রাখতে দু’জন ডেপুটি মেয়রও রাখা হয়। আর তাতেই প্রয়োজন হয় আসানসোল পুরসভা আইনে সংশোধনী আনার।
আসানসোলের ভাবী মেয়র বিধান পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। বারাবনির তিন বারের বিধায়ক তিনি। আসানসোল উত্তর বিধানসভার সৃষ্টিনগরে বিধানের একটি বাড়ি থাকলেও তিনি বারাবনির ভোটার। উপনির্বাচনে জিতে মেয়র হওয়ার শর্ত রক্ষা করতে হলে তাঁকে আসানসোল পুরসভা এলাকার ভোটার হতে হবে। যে হেতু এই পুরনির্বাচনে লড়ে কাউন্সিলর হিসেবে জিতে আসেননি বিধান, তাই নিয়ম অনুযায়ী, মেয়র পদে শপথ নেওয়ার অন্তত ছ’মাসের মধ্যে কোনও একটি ওয়ার্ড থেকে জিতে আসতে হবে তাঁকে। ইতিমধ্যে বিধানের মেয়র হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সূত্রের খবর, তাতে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ। তবে সংশোধনী বিলটি বিধানসভায় পাশ হলেই তা আইনে পরিণত হবে না। তা চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে।
তবে মেয়র পদের দৌড়ে থাকা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি ৪১ বছর ধরে রাজনীতি করছি। যাঁরা মেয়র, দু’জন ডেপুটি মেয়র এবং চেয়ারম্যান কে কে হবে তার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। নিশ্চয়ই দলের ভালর জন্য এই সিদ্ধান্ত।’’ অন্য দিকে অভিজিতের মন্তব্য, ‘‘দল কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা উচ্চ নেতৃত্ব বলতে পারবেন। আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা আমি পালন করব।’’ ওয়াসিমুলের বক্তব্য, ‘‘আরও বেশি করে আসানসোলের সাধারণ মানুষের পাশে থাকা, তাঁদের কাজ করা এবংশহরের উন্নতির জন্য দলের উচ্চ নেতৃত্ব সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শহরের ভালর জন্যই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত।’’
যদিও অগ্নিমিত্রার অভিযোগ, ‘‘বহিরাগত এক জনকে পুরনিগমের দায়িত্ব দেওয়া হল। উনি তো আসানসোলের ভোটার নন। পাঁচগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটার। বারাবনি বিধানসভার বিধায়ক। ১০৬টি ওয়ার্ডের কোথাও মেয়র পাওয়া গেল না! পঞ্চায়েত থেকে মেয়র নিয়ে আসতে হল!’’
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মলয়ের মন্তব্য, ‘‘আইনে রয়েছে মেয়র যাকে খুশি করা যেতে পারে। আর বিধান উপাধ্যায় দলের জেলা সভাপতি। তিনবারের বিধায়ক। তাই দল তাঁকে মেয়র করেছে। এতে অসুবিধার কী আছে!’’