কাঁথি পুরসভার নতুন প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
হুড়োহুড়ি, ধস্তাধস্তির মধ্যে বৃহস্পতিবার দায়িত্ব নিলেন কাঁথি পুরসভার নতুন প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতি। কিন্তু ওই পদে অভিষেকের আগে প্রাক্তন প্রশাসক সৌম্যেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের বাধার মুখে পড়তে হল সিদ্ধার্থকে। বহু চাপানউতোরের পর প্রশাসকের জন্য নির্দিষ্ট দফতরের চাবি হাতে পান তিনি। প্রশাসকের চেয়ারে বসে সিদ্ধার্থ দাবি করেন, ‘‘আগের পুর প্রশাসক এগজিকিউটিভ অফিসারকে চিঠি লিখে বলেছেন, ৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি পদে থাকতে চান। কিন্তু আমি এসডিও-কে বলেছি, আমি এসে গিয়েছি। আমি দায়িত্ব বুঝে নিতে চাই। আমায় কাঁথির মানুষকে পুর পরিষেবা দিতে হবে। আমি যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি দায়িত্ব নেব।’’
অন্যদিকে সৌম্যেন্দুর বক্তব্য, ‘‘সরকারের দেওয়া পদ সরকার যে কোনও সময় নিয়ে নিতেই পারে। কিন্তু সিদ্ধান্তটা বৈধ না অবৈধ, সেটা তো আগে বিচার করতে হবে। ন্যায়বিচার চাই বলেই আমি হাইকোর্টে গিয়েছি। আমার বিশ্বাস, মহামান্য আদালত সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই বিষয়টির সুরাহা করবেন।’’
কিন্তু কেন সিদ্ধার্থকে দায়িত্ব নিতে বাধা দেওয়া হল? জানা গিয়েছে, একটি বিভ্রান্তিকর খবর থেকেই বৃহস্পতিবারের যাবতীয় গোলমাল। কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে তাঁর অপসারণের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বুধবারই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌম্যেন্দু। বৃহস্পতিবার সেই মামলা গ্রহণ করে আদালত। আগামী ৪ জানুয়ারি তার শুনানি হতে পারে। কিন্তু আদালত মামলা গ্রহণ করেছে খবর পেয়েই সেটিকে নিজেদের ‘জয়’ বলে দাবি করেন সৌম্যেন্দু-অনুগামীরা। আর তাতেই সিদ্ধার্থর পরিবর্তে সৌম্যেন্দুকে ফের কাঁথির পুর প্রশাসক পদে বসানোর দাবি উঠতে শুরু করে। শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। অন্যদিকে, সিদ্ধার্থর সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনও ঢুকে পড়েন পুরসভায়। তার পরেই দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি বেধে যায়। শেষপর্যন্ত বিস্তর টানাপড়েনের পর পুর প্রশাসকের দফতরের চাবি হাতে পান সিদ্ধার্থ এবং তাঁর অনুগামীরা।
আরও পড়ুন: অপসারণকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে কনিষ্ঠ অধিকারী
আরও পড়ুন: ‘জঙ্গলমহলে অত্যাচারকারী লাল পার্টিটাই গেরুয়া হয়েছে’, আক্রমণে আদিবাসী নেতা
রাজ্য সরকারের নির্দেশে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে মঙ্গলবার রাতে অপসারিত হন সৌম্যেন্দু। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন সিদ্ধার্থ। সেই মতোই বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরসভায় যান সিদ্ধার্থ। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরেই কাঁথি পুরসভা অধিকারী পরিবারের হাতে ছিল। এতে যেমন অনেকে খুশি ছিলেন, তেমনই অধিকারী পরিবারের বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভও ছিল। সেই ক্ষুব্ধ তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা বৃহস্পতিবার সিদ্ধার্থকে অভিবাদন জানাতে আসেন পুরভবনে। পুরকর্মীরাও নিয়মমতো নতুন প্রশাসককে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানাতে তৈরি ছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই খবর আসে সৌম্যেন্দুর করা মামলাটি গ্রহণ করেছে আদালত। কনিষ্ঠ অধিকারীর অনুগামীদের অনেকে মনে করে নেন, প্রশাসকের পদ থেকে সৌম্যেন্দুর অপসারণ ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই ‘রটনা’য় নির্ভর করেই অধিকারী পরিবারের সমর্থকরা মিছিল করে পুরসভার সামনে চলে আসেন। কাঁথি মহকুমা শাসকের দফতরের সামনেও সৌম্যেন্দুকে পুনরায় প্রশাসকের পদে বসানোর দাবি জানিয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়।
সিদ্ধার্থ প্রশাসকের দায়িত্ব নিতে গেলে পুরসভায় শুরু হয় অন্য নাটক। সিদ্ধার্থ সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁর হাতে প্রশাসকের জন্য নির্দিষ্ট দফতরের চাবি দেওয়া নিয়েও চলে টানাপড়েন। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার চাবি দিতে অস্বীকার করে সিদ্ধার্থকে জানান, সৌম্যেন্দু কাজের সূত্রে পাঁচ দিনের জন্য বাইরে রয়েছেন। তাই এই সময়ের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব নয়। কিন্তু সিদ্ধার্থ তা মানতে রাজি হননি। হইচই শুরু করেন তাঁর সমর্থকরাও। দীর্ঘ বাদানুবাদের পরে অবশ্য দফতরের চাবি হাতে পান সিদ্ধার্থ। পুর প্রশাসকের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর তিনি বলেন, “গতকাল (বুধবার) চিঠি পেয়েই আমি কাঁথি পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার এবং মহকুমা শাসককে বৃহস্পতিবার দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই বলে জানিয়েছিলাম।’’ দফতরের চাবি নিয়ে টানাপোড়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই সময় আমি পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারকে পরিষ্কার জানিয়ে দিই, রাজ্য সরকারের নির্দেশে আমি দায়িত্বে এসেছি। মানুষের পরিষেবার কাজ পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রাখা যাবে না। বেশ কিছু সময় আলোচনা চলার পর উনি আমার হাতে চাবি দিয়ে দেন।" আদালতে সৌম্যেন্দুর মামলার আবেদন প্রসঙ্গে সিদ্ধার্থ বলেন, “এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।”