ছেলের কফিনবন্দি দেহের সামনে কান্না সমরেশের মায়ের। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
ইটের আঘাতে নয়, সোমবার মালদহে আরপিএফের এক কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে গুলিতেই। হকারদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় সমরেশ সামন্ত নামে ওই কনস্টেবল ব্যারাকের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ দেখা যায়, তিনি রক্তাপ্লুত হয়ে পড়ে রয়েছেন। অনুমান করা হয়েছিল, বাইরে থেকে ছোড়া ইটের আঘাতে মাথা ফেটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তের পরে দেখা যায়, একটি গুলি সমরেশবাবুর বাঁ গাল ভেদ করে ঢুকে মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তাতেই মারা গিয়েছেন তিনি। আরপিএফের দাবি, লাইসেন্সহীন যে হকারেরা ওই দিন আন্দোলন করছিলেন, তাঁদেরই কারও গুলিতে সমরেশবাবুর মৃত্যু হয়েছে। হকারদের পাল্টা দাবি, তাঁদের কাছে বন্দুকই ছিল না। গুলি চালাচ্ছিল আরপিএফ-ই। তাই কোনও সহকর্মীর গুলিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সমরেশবাবুর মুখে লাগে।
পুলিশের বড় কর্তাদের একাংশেরও সন্দেহ, কোনও সহকর্মীর গুলিতেই মারা গিয়ে থাকতে পারেন সমরেশবাবু। গুলিটি যে ভাবে তাঁর মাথা ফুঁড়ে গিয়েছে, তা কেবল স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলিতেই হতে পারে। হকারদের কাছে এমন রাইফেল থাকা সম্ভব নয়। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদি বলেন, ‘‘ওই আরপিএফ জওয়ানের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। আরপিএফেরও অভিযোগ পেয়েছি।’’
লাইসেন্সহীন হকাররা স্টেশনে ব্যবসা করতে দেওয়ার দাবিতে ওই দিন দুপুরে তুমুল তাণ্ডব চালায়। সে দিন সকালে ঝাটন দাস নামে এক হকার মরিয়া হয়ে প্ল্যাটফর্মে রুটি-সব্জি বিক্রি করতে শুরু করায় আরপিএফ জওয়ানেরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। আরপিএফ সে ব্যাপারে অভিযোগও নিতে চায়নি বলে হকারদের দাবি। তারপরেই লাইসেন্সহীন হকারেরা রাস্তা অবরোধ করেন ও আন্দোলনে নামেন। আরপিএফ তখন শূন্যে ১৩ রাউন্ড গুলি চালায়। সোমবার রাতেই ইংরেজবাজার পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুতপা মুখোপাধ্যায় এবং বিজেপি কর্মী সুবোধ দাস সহ ২০০ জন হকারের নামে ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ করে আরপিএফ। তাদের অভিযোগ, হকারেরা তাদের ব্যারাকের দিকে ইট, গুলি ছোড়ে। সেই গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে সমরেশবাবুর।
বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায় অবশ্য বলেন, ‘‘আরপিএফ নিজেদের দোষ ঢাকতে এখন আমাদের ঘাড়ে বন্দুক রাখতে চাইছে। হকারদের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্রই ছিল না।’’ কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক কাজি নজরুল ইসলামও একই দাবি করেন। বিজেপির সুতপাদেবীর দাবি, তাঁর নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করেনি।
এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে পূর্ব রেলের আইজি এস সিংহ এবং আরপিএফের মালদহের কমান্ড্যান্ট এস এস তিওয়ারির সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন ডিআরএম রাজেশ আরগাল। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের পর বিকেল চারটে নাগাদ আরপিএফের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এনে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। তখন সমরেশবাবুর বাবা অরুণ সামন্ত বলেন, ‘‘ছেলের কী ভাবে মৃত্যু হল, তা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’
পুরো ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন আরপিএফ কর্তারা। আইজি বলেন, ‘‘যা বলার রেল কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ ডিআরএম অবশ্য জানিয়েছেন, কী করে ওই জওয়ানের মৃত্যু হল তার তদন্ত হবে।