শুভেচ্ছার ঠেলায় হঠাৎ মহার্ঘ গোলাপ

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন গোলাপের দাম ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ডাঁটিওয়ালা ২৪ ইঞ্চির বেঙ্গালুরু গোলাপ প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। যার এমনিতে দাম ৬-৭ টাকা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০২:০৭
Share:

সোমবার ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন। অনেকেই পরীক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রাজপুর-সোনারপুর এলাকায় উপ-পুরপ্রধান শান্তা সরকারের হাত থেকে গোলাপ নিতে রোদের মধ্যে লাইন পরীক্ষার্থীদের। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

প্রেমদিবস নয়। কোনও উৎসব বা পুজোও নয়। তবু চড়চড় করে বেড়ে গেল গোলাপের দাম! সৌজন্যে, কুসুমাস্তীর্ণ শুভেচ্ছা!

Advertisement

সোমবার শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। আর তার প্রথম দিনেই পরীক্ষার্থীরা ভেসে গেল সেই শুভেচ্ছার ঠেলায়! হাতে লাল বা হলুদ গোলাপ নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল সকাল হাজির হয়ে যান শাসক দলের ছোট-বড়-মাঝারি নেতারা। কোথাও কোথাও পুলিশও! যার জেরে হঠাৎই যেন পৌষ মাস ফুল ব্যবসায়ীদের!

এক মাস আগেই ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে দেদার বিক্রি হয়েছে গোলাপ। কিন্তু সে সময়ে ফলন কম আর চাহিদা বেশি থাকায় দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বসন্তে ফলন বেড়েছে। দামও কম। কিন্তু মাধ্যমিকের প্রথম দিন সেই দামই হঠাৎ এক লাফে দ্বিগুণ। তাতেও অবশ্য পিছপা হননি শাসক দলের নেতারা। তাঁদের দাবি, শুভেচ্ছা জানাতে হলে গোলাপ ছাড়া গতি নেই। তাই দাম বেশি নিলেও ক্ষতি নেই।

Advertisement

এ দিন বেলা ১১টা থেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হয়েছিল পরীক্ষার্থীরা। তবে তাদের আগেই পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে গোলাপের ডালি নিয়ে চলে যান উপ-পুরপ্রধান থেকে কাউন্সিলর, এমনকী বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যেরাও। কোথাও কোথাও স্কুলের গেটের সামনে রীতিমতো দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন নেতা-নেত্রীরা। আর এই ফুল দেওয়ার হিড়িকে প্রখর রোদেও লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।

যেমন রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকায় দেখা গেল, উপ-পুরপ্রধান শান্তা সরকারের হাত থেকে হলুদ গোলাপ নিতে লাইন দিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, জনপ্রতিনিধির শুভেচ্ছা নিতে গিয়ে প্রখর রোদে পরীক্ষার্থীদের লাইন দিতে হবে কেন? বারবার শান্তাদেবীর মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি।

স্কুলের গেটের সামনেই টেবিলে রাংতা ও বাহারি পাতা দিয়ে মোড়া লাল গোলাপ সাজিয়ে বসেছিলেন বেলুড়ের কাউন্সিলর পল্টু বণিক। শনি-রবিবার থেকেই লাল বা হলুদ গোলাপের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন ওই সব নেতা-নেত্রী। পাড়ার ফুল বিক্রেতা বা মল্লিকঘাটে দেওয়া হয়েছিল বরাত। যেমন, হাওড়ার মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা বললেন, ‘‘পাছে একসঙ্গে এত গোলাপ পেতে সমস্যা হয়, তাই আগে থেকেই ৪০০ পিস লাল গোলাপের অর্ডার দিয়েছিলাম। সঙ্গে চকলেট আর পেনও দিয়েছি।’’

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন গোলাপের দাম ছিল প্রায় দ্বিগুণ। ডাঁটিওয়ালা ২৪ ইঞ্চির বেঙ্গালুরু গোলাপ প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। যার এমনিতে দাম ৬-৭ টাকা। আবার এ রাজ্যের ‘মিনিপল’ গোলাপের দাম ছিল ১০ টাকা পিস, যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে চার-পাঁচ টাকায়। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘এ বছর মাধ্যমিক শুরুর দিনে গোলাপ বিতরণের চলটা অনেক বেশি। অনেকে দু’দিন আগেই অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ আবার ভোরেই ফুল বাজারে এসে কয়েকশো গোলাপ কিনেছেন।’’

তবে এ দিন পরীক্ষা শুরু হতেই দেখা গেল, গেটের মুখে পাওয়া ‘দামি’ গোলাপ পরীক্ষার্থীদের ব্যাগে বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে স্কুলের বারান্দাতেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement