ভাঙচুরের পরে হোটেলে পুলিশকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র
কলকাতার মিন্টো পার্কে রোজ ভ্যালির একটি হোটেলে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালালেন ক্ষিপ্ত এজেন্ট ও আমানতকারীরা।
কথা ছিল শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে একজন ইনস্পেক্টরের অধীন দশ জন পুলিশের একটি দলকে পার্ক প্রাইম হোটেলের সামনে মোতায়েন ছিল। শ’তিনেক এজেন্ট এবং আমানতকারী বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ওই হোটেলের সমানে জড়ো হন। এজেসি বোস রোডের যান চলাচল কিছুক্ষণের জন্য ব্যাহত হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় হোটেলের মূল ফটক। তা দেখেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের চাপে বাধ্য হয়ে গেট খুলে দিলে তাঁরা ঢুকে চেয়ার, টব ভাঙতে শুরু করেন। রিসেপশনের কাচও ভাঙে। পুলিশ জানিয়েছে, সাত তলা ওই হোটেলের সব ঘরেই আবাসিক ছিলেন। তাণ্ডবে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও বিক্ষোভকারীরা কারও কোনও ক্ষতি করেননি। পরে পুলিশের বড় বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দু’জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করেছে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ।
আমানতকারী ও এজেন্টদের প্রতিনিধি বিজয় পাঁজা পরে বলেন, ‘‘ভাঙচুর করার উদ্দেশ্য ছিল না। কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে তা করে ফেলেছে। রোজ ভ্যালি বিভিন্ন নামে সংস্থা খুলে আমাদের টাকা সরিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বন্ধ তুলে নিন, বার্তা মোর্চাকে
পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক মাস ধরেই বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদের রোজ ভ্যালির এজেন্ট ও আমানতকারীরা হোটেলের সামনে মাঝেমধ্যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। মাসখানেক আগে তাঁদের সঙ্গে হোটেল কর্তৃপক্ষের আলোচনাও হয়। পুলিশের একাংশের দাবি, তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, গৌতম কুণ্ডু সায় দিলে তবেই কিছু টাকা ফেরানো সম্ভব। বিজয়বাবুর দাবি, জেলে গিয়ে তাঁরা গৌতমের সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, সিবিআই এবং ইডি অনুমতি দিলেই টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু আমানতকারী এবং এজেন্টরা ইডি ও সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও সুরাহা পাননি। এর পরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। কিন্তু সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে ওদেরই দায়িত্ব টাকা ফেরত দেওয়াটা।’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা বলেন, ‘‘ডেলো-তে রোজভ্যালির মালিকের সঙ্গে সরকারের গোপন বৈঠক হওয়ার পরে যে আর সরকারের টাকা ফেরত দেওয়ার সদর্থক ভূমিকা নেই, তা সবাই বুঝে গিয়েছে।’’ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘মানুষ দিনের পর দিন হতাশ হলে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।’’ আর রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের আশঙ্কা, ‘‘টাকা ফেরতের দায়িত্ব রাজ্য সরকার না নিলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।’’