শিবির করে কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন রূপা

লক্ষ্য, হারানো জমি পুনরুদ্ধার। লোকসভা ভোটের পরে বীরভূমের যে এলাকায় নিয়মিত শাসক দলকে টক্কর দিতে শুরু করেছিল বিজেপি, সেই পাড়ুইয়ে আজ তাদের একাধিক সদস্য প্রকাশ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়ুই শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ২০:১২
Share:

লক্ষ্য, হারানো জমি পুনরুদ্ধার। লোকসভা ভোটের পরে বীরভূমের যে এলাকায় নিয়মিত শাসক দলকে টক্কর দিতে শুরু করেছিল বিজেপি, সেই পাড়ুইয়ে আজ তাদের একাধিক সদস্য প্রকাশ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে পাড়ুইতে গিয়ে প্রয়োজনে রাত জেগে, শিবির করে কর্মী-সমর্থকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বিজেপি নেত্রী রুপা গঙ্গোপাধ্যায়। সাত্তোরের নির্যাতিতাকে সঙ্গে নিয়ে তুললেন জাতীয় পতাকা। বার্তা দিলেন নিমাই দাসের মতো সদ্য দল থেকে বহিষ্কৃতদের, যাঁদের আগামীকাল, রবিবার বৈঠক করে ঠিক করার কথা তৃণমূলে ফিরবেন কি না।

Advertisement

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে শনিবার রূপাকে পাড়ুইতে পাঠান বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সঙ্গী দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যে দলের মুখপাত্র রীতেশ তিওয়ারি, কেন্দ্রীয় মহিলা মোর্চার নেত্রী মৌসুমী বিশ্বাসেরা। এ দিন সকালে পাড়ুই বাসস্ট্যান্ডে ও কিছু পরে রাঘাইপুরে দু’টি অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা তোলার পরে রুপার মন্তব্য, ‘‘বিজেপি ছাড়ার জন্য শাসক দল এবং পুলিশ—দু’তরফ থেকে চাপ আসছে এই এলাকায়। মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তবে তারই মধ্যে শেষ পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা থাকবে। প্রয়োজনে আমরা ক্যাম্প করে রাত জেগে নির্যাতিতদের পাশে থাকব।’’ সাত্তোরের নির্যাতিতা বলেন, ‘‘বিজেপি-তে ছিলাম-আছি-থাকব। বিজেপি করার জন্য আমাকে জেল খাটানো হয়েছে। পনেরো বছরে জামিন পেতাম কি না সন্দেহ। সে সময় যারা আমার পাশে ছিল, তাদের ছেড়ে অন্য কোথায় যাব?’’

তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য রূপার মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ওখানে বিজেপি-র কোনও জনসমর্থন নেই। তাই উনি (রূপা) এমন কথা বলছেন।’’ জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

Advertisement

জেলা রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহের নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন সাত্তোর, পাড়ুই, ইলামবাজারের মতো যে যে এলাকায় লোকসভা ভোটের পরে বিজেপি-র চোখে পড়ার মতো অস্তিত্ব ছিল বা দল আড়েবহরে বাড়ছিল, সম্প্রতি তা আর দেখা যাচ্ছে না। হৃদয় ঘোষ বা নিমাই দাসের মতো তৃণমূলের যে সব বিক্ষুব্ধ বিজেপি-শিবিরে এসেছিলেন, তাঁরা প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে বহিষ্কৃত হয়েছেন। এমনও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না, কিন্তু ক্ষোভ তাঁদের কম নয়। এই পরিস্থিতিতে রূপার মতো এক জনকে এলাকায় পাঠানোটা জরুরি হয়ে ওঠে। প্রয়োজন ছিল, দলের অন্দরের বিক্ষুব্ধদের বার্তা দেওয়ার। রূপা এ দিন ‘নরমে-গরমে’ সে কাজটাই করেছেন।

রূপার কথায়, ‘‘অনেকে কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে এসেছিলেন। তাঁরা ভাবছেন, আবার ফিরবেন। একটা-দু’টো মানুষ আলাদা ভাবে ‘ডিল’ করে, অন্য মানুষদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করলে করুক। আমরা জোর করে, ভয় দেখিয়ে, টাকা বা রাজনৈতিক আসনের প্রলোভন দিয়ে কাউকে বিজেপি-তে রাখতে চাইব না।’’

তিনি কি নিমাই দাস বা হৃদয় ঘোষের কথা বলছেন? রূপার জবাব, ‘‘কিছু খবর পেয়েছি। বোঝাপড়ার অঙ্কটাও জেনেছি। প্রত্যেকের নিজস্ব বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কার কী বাধ্যবাধকতা সেটা আমরা নাই বা আলোচনা করলাম। জীবন পরিবর্তনশীল। নিমাই ওখানে গিয়ে ভাববেন ‘ভুল করেছি’। ফিরে আসবেন। সেই অপেক্ষাতেই আছি।’’

নিমাই দাস অবশ্য বলেন, ‘‘ওঁর থেকে অনেক বেশি দিন রাজনীতিতে রয়েছি। শুনেছি, বিজেপি-র রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ওঁর তেমন পটে না। কে বলতে পারে, উনি তৃণমূলে আসবেন না?’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘আমাদের রবিবারের বৈঠকের উদ্দেশ্য বদলাচ্ছে না। দেখবেন, আমাদের সঙ্গে কত জন আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement