সংস্থার ডিরেক্টর রচিতা দে
বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাঙালির পথ চলার সঙ্গী শ্রীলেদার্স। সত্যব্রত দের নিজের হাতে তৈরি সেই কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব এখন তাঁর উত্তরসূরিদের হাতে। বছর দুই আগে সংস্থার ডিরেক্টর পদে আসীন হয়েছেন সত্যব্রত দে'র মেয়ে রচিতা দে। লকডাউন কাটিয়ে দুর্গাপুজো, তার পর নতুন বছর, সব কিছু সামলিয়ে তিনি কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলেদার্সকে? কী কী পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর? কেমন ভাবে সামলেছেন কোভিডের ধাক্কা? এই সব নিয়েই আলোচনা করলেন শ্রীলেদার্সের বর্তমান ডিরেক্টর রচিতা দে।
সময়টা ১৯৯১। রচিতা যখন জন্মেছিলেন শ্রীলেদার্সের ব্যবসা তখন মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছেন। সত্যব্রত দে একা হাতে সামলাচ্ছেন সব কিছু। রচিতা দে প্রথমেই স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর সবটা ঘিরেই রয়েছে ব্যবসা। তাঁর বেড়ে ওঠা, স্কুল, বিদেশ গিয়ে পড়াশুনা, জীবনের প্রতিটা স্তরে কোনও না কোনওভাবে শ্রীলেদার্স জুড়ে রয়েছে।
ছোট থেকেই বাবার কথাগুলো মন দিয়ে শুনতেন রচিতা। ঠিক কেমন ভাবে সব ছোট ছোট জিনিসগুলোকে ভাবতে হয়, ব্যবসার নেপথ্যের ঘটনা ইত্যাদি। বলা বাহুল্য তিনি ছোট থেকেই বাবার মতো হতে চাইতেন।
শো’রুমে বাবা সত্যব্রত দে'র সঙ্গে ছোট্ট রচিতা
ম্যানেজমেন্টের পড়াশুনা শেষ হওয়ার পরে ব্যবসায় যোগ দেন রচিতা। সময়টা ২০১৮। বাবার সংস্থা হলেও কোনওভাবে কোনও ছাড় পাননি তিনি। বেশ কিছু দিন কাজ করার পরে অবশেষে ২০১৯-এ গুরুভার এসে পড়ে কাঁধে। সংস্থার ডিরেক্টরের চেয়ারে বসেন রচিতা দে। অবশ্য বাবার প্রত্যেকটা কথা এখনও মেনে চলেন তিনি।
রচিতা যখন সংস্থার দায়িত্ব নিলেন, তার কিছুদিনের মধ্যেই কোভিড। যেন এক অজানা ঝড়ের মধ্যে পড়ল গোটা বিশ্ব। সেই ঝড়ের হাত থেকে বাদ যায়নি শ্রীলেদার্সও। সত্যব্রত বাবুর কড়া নির্দেশ ছিল এই সময় কোনও কর্মীকে ছাঁটাই করা যাবে না। সেই কথাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন রচিতা। তাঁর বুদ্ধি এবং সঠিক সিদ্ধান্তই পরবর্তী সময়ে পার্থক্য গড়ে দেয়।
কোভিডের এত বড় ধাক্কা কী ভাবে সামলেছিলেন? উত্তরে রচিতা জানালেন, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরেই বিভিন্ন ধরনের অ্যাক্টিভিটি শুরু করে শ্রীলেদার্স। বিভিন্ন আবাসনে স্টল দেওয়া, হোম ডেলিভারি চালু করা, কর্মীদের টিকাকরণ করা ইত্যাদি। অবশ্যই সবটা হয়েছিল কোভিড বিধি মেনেই।
লকডাউন ও কোভিডের কারনে ইতিমধ্যেই ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে, সংস্থার উপরিমহলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন যে মাস্ক, স্যানিটাইজার, ফেস শিল্ড, পিপিই কিট ইত্যাদি বিক্রি করবে শ্রীলেদার্স। প্রধানত চিকিৎসাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি এবং দোকানেও এই জিনিসপত্রগুলি বিক্রি করা হয়।
এরপরেই ২০২১ সাল। ২০১৯-এর তুলনায় ২০২১ শে পুজোর সেল ভালই হয়েছে শ্রীলেদার্সের। খানিক হলেও দেখা গিয়েছে চেনা ভিড়। দোকানে বিক্রি তো বটেই, এরই সঙ্গে বাড়ি বসে গ্রাহকের কাছে নিমেষে পৌঁছে যাওয়ার জন্য শ্রীলেদার্সের ই-কমার্স www.sreeleathers.com এ ব্যবসার পরিকাঠামোকে আরও ভালো করা হয়েছে। এছাড়াও কলকাতার বাইরে দিল্লিতে একটি সেন্ট্রাল ওয়ারহাউজ খোলার পরিকল্পনাও রয়েছে আগামীদিনে। যাতে প্রত্যেকের চাহিদা সঠিক ভাবে পূরণ করা যায়।
রচিতা দে নিজেও মনে করেন ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলির জন্য ২০২২ সালে অনেক ভাল জিনিস অপেক্ষা করছে। কারণ ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ধীরে ধীরে দেশীয় বাজারের দিকেই ঝুঁকছেন সিংহভাগ মানুষ। তাঁর মতে, শ্রীলেদার্সের মতো যে যে ভারতীয় ব্র্যান্ড কম দামে ভাল মানের পণ্য সরবারহ করবে, তারা প্রত্যেকেই লাভের মুখ দেখবে।