সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যে তৃণমূলের সঙ্গে থেকে লড়াই করায় আপত্তি নেই সিপিএমের। তবে রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, জাতীয় ও রাজ্য স্তরের রাজনীতির বাস্তবতা আলাদা। এ বার দলের সেই অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও।
কৃষ্ণনগরের পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে বৃহস্পতিবার দলের প্রাক্তন নদিয়া জেলা সম্পাদক আশু ঘোষের স্মরণসভায় এসেছিলেন সূর্যবাবু। জাতীয় জোট প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দিল্লিতে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার সময়ে আমাদের বলা হয়েছিল, উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) থাকতে চান। আমরা বলেছি, থাকবেন। বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় স্তরে যদি কিছু হয়, তাতে যারাই এক সঙ্গে হবে, আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হবে না।” তাঁর ব্যাখ্যা, বাংলায় তৃণমূল ‘স্বৈরাচারী’ সরকার চালাচ্ছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করছে, বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত ও পুরসভা করার ডাক দিয়েছিল তারা। শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও ভূরি ভূরি। সূর্যবাবুর মতে, ‘‘এদের প্রতি যাঁরা দুর্বলতা দেখাচ্ছেন, তাঁরা কার্যত বিজেপির হাত শক্তিশালী করছেন। এখন বিজেপি দুর্বল হয়েছে কিন্তু এখনও বিপজ্জনক আমাদের রাজ্যের পক্ষে। সে জন্য এটা করার কোনও অবকাশ নেই। আর সারা দেশে জাতীয় পরিস্থিতির নিরিখে কী হবে, সেটা জাতীয় নেতারা ঠিক করবেন।”
সিপিএম নেতৃ্ত্বের বক্তব্য, জাতীয় স্তরে অভিন্ন লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সমন্বয় গড়ে উঠলেও রাজ্যওয়াড়ি সমীকরণ আলাদা থাকে। জাতীয় স্তরে ও বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমঝোতা থাকলেও কেরলে তারা যুযুধান। একই কথা তৃণমূলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
সিপিএমের প্রধান শত্রু কে? সূর্যবাবু বলেন, “প্রধান শত্রু দেশের ক্ষেত্রে বিজেপি। রাজ্যে যাঁরা বলছেন খালি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করো, তাঁরা তৃণমূলকে কোনও কথা দিয়েছেন কি না, আমি বলতে পারব না। আমরা দু’জনের বিরুদ্ধেই বাকি সবাইকে একজোট করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দু’টোকে এক করে আমরা কখনওই দেখি না।” বিজেপিকে রুখতে মানুষ বাধ্য হয়েই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন বলে মন্তব্য করে সূর্যবাবু ফের বুঝিয়েছেন, দু’দলের বিরোধিতা করলেও বিজেপির সঙ্গে তাঁরা কাউকে এক করে দেখছেন না।
ভোটের প্রচারে ‘বিজেমূল’ স্লোগান যে ঠিক হয়নি, তা-ও এ দিন ফের বলেছেন সূর্যবাবু। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি এবং তৃণমূলের এক দল থেকে অন্য দলে যাতাযাতের প্রবণতা দেখে সামাজিক মাধ্যমে ‘বিজেমূল’ কথাটি চালু হয়েছিল। কিন্তু দলের রাজনৈতিক প্রচারে তার ব্যবহার ঠিক হয়নি।
রাজ্যে বকেয়া পুরভোট করার পক্ষেই সওয়াল করেছেন সূ্র্যবাবু। তাঁর বক্তব্য, করোনা যখন ছিল না, তখন থেকেই মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভার ভোট বকেয়া আছে। তাঁরা সরকারে থাকার সময় নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোট করেছেন। অথচ এই সরকার পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও বছরের পর বছর ভোট করছে না। কখনও আদালত থেকে আদেশ নিয়ে এসে ভোট করাতে হয়েছে।