কমিশনে রেকর্ড কই, পার্টিতে ফিরল বিতর্ক

ঘটনার পরে গড়িয়ে গিয়েছে সাড়ে ৭ বছর। পলিটব্যুরোর সদস্য হয়ে গিয়েও আক্ষেপ ভোলেননি একেপি। পশ্চিমবঙ্গে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘটনা শুধু তামিলনাড়ুর বরদারাজনের কাহিনি ফের মনে পড়িয়ে দিচ্ছে কাউকে কাউকে!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

এখনও মনে আছে এ কে পদ্মনাভনের বিধ্বস্ত গলাটা। ‘‘এত তাড়াহুড়ো না করলেই বোধহয় ভাল হতো!’’ আক্ষেপ ছিল একেপি-র। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডব্লিউ আর বরদারাজনের দেহ সদ্য উদ্ধার হয়েছে পেরিয়ার লেক থেকে। সিটু নেতা ডব্লিউআর-এর ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত কিছু অভিযোগে তদন্ত কমিশনের ভার ছিল একেপি-রই হাতে। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ডব্লিউআর-কে কেন্দ্রীয় কমিটি-সহ দলের সব নির্বাচিত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল কলকাতার বৈঠকে। চেন্নাইয়ে ফিরেই ডব্লিউআর আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, প্রিয় দল তাঁর কথা শুনল না।

Advertisement

ঘটনার পরে গড়িয়ে গিয়েছে সাড়ে ৭ বছর। পলিটব্যুরোর সদস্য হয়ে গিয়েও আক্ষেপ ভোলেননি একেপি। পশ্চিমবঙ্গে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘটনা শুধু তামিলনাড়ুর বরদারাজনের কাহিনি ফের মনে পড়িয়ে দিচ্ছে কাউকে কাউকে! ঋতব্রত অবশ্য বরদারাজন হতে চাননি। হাওড়ায় দলের সভা থেকে আলিমুদ্দিনে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে। তদন্ত কমিশনই সে সব অভিযোগ তাঁকে বলবে। আপাতত তিনি সাসপেন্ড। আগে সাসপেন্ড করে কমিশনের কাজ শুরু হতেই তিনি বুঝেছিলেন দলীয় নেতৃত্বের মনোভাব কী। কমিশনের শুনানি-পর্ব কিছুটা এগোতেই বাধ্য হয়ে তিনি গোপনে সব রেকর্ডিং করে রেখেছেন বলে সাংসদের দাবি!

সেই টেপের গর্ভে কী আছে, টেপই জানে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দামন্দের ঝড় বইছে। দলের বিরুদ্ধেই ‘স্টিং’ করেন, এ আবার কেমন কর্মী? ঘনিষ্ঠ মহলে ঋতব্রতও অকপটে মেনে নিচ্ছেন, তিনি অনৈতিক কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর যুক্তি, করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। কারণ, ‘গিভিং দ্য ডগ আ ব্যাড নেম বিফোর কিলিং’— এই কৌশলের প্রয়োগ তিনি সিপিএমে আগেও দেখেছেন! তাঁর আশঙ্কা সত্যি করেই বহিষ্কারের পরে সিপিএম বিরাট বিবৃতি দিয়ে প্রকাশ্যে বলেছে, কত গুরুতর দোষে ঋতব্রত দোষী ছিলেন।

Advertisement

এই গোপন টেপ এবং প্রকাশ্য বিবৃতির সংঘাতেই প্রশ্ন উঠছে, প্রায় সমান্তরাল বিচার চালিয়ে সিপিএমে যখন এত তদন্ত কমিশন হয় এবং কমিশনের রায়ের উপরে জনপ্রতিনিধি-সহ নেতাদের সামাজিক সম্মান নির্ভর করে, তা হলে সেই বিচার প্রক্রিয়া দল নিজেই কেন ভি়ডিওগ্রাফি বা অডিও রেকর্ডিং করে রাখে না? তা হলে তো অভিযুক্তের কথাকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ সহজে খণ্ডন করা যায়! দলীয় সূত্রের খবর, কমিশনের প্রক্রিয়া এখনও মান্ধাতার আমলের। কমিশনের কোনও সদস্য হাতে লিখে রাখেন রুদ্ধদ্বার শুনানির বয়ান। পরে তা ছাপিয়ে রিপোর্ট তৈরি হয়। পরে স্বভাবতই অভিযুক্ত পক্ষের প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে, রিপোর্টে এ দিক ও দিক হয়নি তো?

সিপিএমে রূপচাঁদ পাল, মইনুল হাসানেরাও কমিশনের মুখে পড়ে একপেশে প্রক্রিয়া নিয়ে দলের অন্দরে সরব হয়েছেন। দলের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবি অবশ্য বলছেন, ‘‘ভি়ডিওগ্রাফ বা অডিও রেকর্ডিং করা হবে কি না, সেটা পরিস্থিতি বিচার করে সংশ্লিষ্ট ঘটনার কমিশনকেই ঠিক করতে হয়।’’ আর স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মেনে নিচ্ছেন, ‘‘আগে কখনও এই দিকটা ভাবা হয়নি। ডব্লিউআর এবং ঋতব্রতের ঘটনা দু’টোর পরে এ বার হয়তো ভাবতে হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement