ফাইল চিত্র।
রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশ চান, আত্মপক্ষ সমর্থনের আর কোনও সুযোগ না দিয়েই বহিষ্কার করে দেওয়া হোক। কিন্তু স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, অপরিণত বয়সে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলার দায়ে নবীন সাংসদকে একেবারে ঝেড়ে ফেলা উচিত নয়। অবশ্যই তিনি অন্যায় করেছেন। তার জন্য শাস্তি হোক। কিন্তু চূড়ান্ত শাস্তি নয়। এই টানাপড়েনেই অন্তত এক দিনের জন্য হলেও ঝুলে থাকল ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্য! চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যেতে পারে আজ, বুধবারই।
শীর্ষ নেতাদের কয়েক জনকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করায় দলের মধ্যে ঋতব্রতের মতো উঠতি সাংসদের জায়গা যখন ক্ষীণ হয়ে আসছে, সেই সময়েই নিঃশব্দে সিপিএমের অন্দরে ঘটে গিয়েছে অন্য একটি ঘটনা। বিতর্কের চোটে পণ্ড হওয়ার পরেও খাস কলকাতায় দলের পাইকপাড়া-সিঁথির নবগঠিত এরিয়া সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বাবিন বন্দ্যোপাধ্যায়কেই! যিনি দমদমের কুখ্যাত জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই এবং যাঁর বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা অভিযোগ আছে। এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কয়েক জন নেতাকে বাদ দিয়ে কেন বাবিন, তরুণ নাহা রায়, সন্ধ্যা মিশ্র, মনি সামন্তদের নতুন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের সদস্যদের একাংশই। গোলমালে সে দিন পণ্ড হয়েছিল বৈঠক। কয়েক দিন স্থগিত রাখার পরে আবার সেই বিতর্কিত নেতাদের নিয়েই কমিটি গড়ে ফেলা হয়েছে কলকাতা জেলা সিপিএমের হস্তক্ষেপে!
উত্তর কলকাতার ওই ঘটনায় দলের একাংশের ক্ষোভের তির বর্ষীয়ান নেতা রাজদেও গোয়ালার দিকে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঋতব্রতের মতোই ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত কিছু অভিযোগে অতীতে রাজ্য কমিটি থেকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল রাজদেওবাবুকে। কিন্তু তার পরেও তাঁকে ঘিরে নানা বিতর্কে চোখ বুজে থেকেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তা হলে ঋতব্রত আরও সুযোগ পাবেন না কেন, প্রশ্ন তুলছেন ওই নেতারা।
এবিপি আনন্দে সোমবার রাতের সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাংলার নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, ইয়েচুরি কথা বলেছেন ঋতব্রতের সঙ্গেও। দলের অন্দরে ইয়েচুরির মত, কোণঠাসা হয়ে পড়ে ঋতব্রত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কম বয়সের কারণে তাঁকে শাস্তি দিয়েও আরও একটু সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া, বহিষ্কার করে দিলেও তিনি সাংসদ থেকে যাবেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যও বলছেন, ‘‘ঋতব্রতের বিরুদ্ধে একতরফা বলে যাওয়া হচ্ছে। ওর অভিযোগগুলোও তো বিবেচনার যোগ্য!’’ তবে রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই মনে করেন, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ঋতব্রতকেও দলের গঠনতন্ত্রের ১৯(১) ধারায় পত্রপাঠ বহিষ্কার করা উচিত।
যোগাযোগ করা হলে বেঙ্গালুরু থেকে মঙ্গলবার ইয়েচুরির সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বই প্রথমে সিদ্ধান্ত নেবেন। দেখা যাক!’’ রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন কলকাতায় ছিলেন না। আলিমুদ্দিনে আজ, বুধবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেই সাংসদ-কাণ্ডে যবনিকা টানার চেষ্টা হবে।