বিজেপির বিরোধিতার কথা বলছে তিন দলই। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিধানসভায় সর্বদল প্রস্তাব আনার প্রয়াসকে ঘিরে টানাপড়েন বাধল শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বাম-কংগ্রেসের মধ্যে।
রাজ্যে বিজেপির উত্থানের প্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী প্রস্তাবে বাম ও কংগ্রেসকে পাশে পেতে চায় সরকার পক্ষ। কিন্তু তাদের তৈরি করে দেওয়ায় খসড়ায় সম্মত নয় বিরোধী দুই দল। তাদের যুক্তি, রাজ্যে বিজেপি তথা মেরুকরণের বাড়বাড়ন্তের জন্য তৃণমূলের নীতিই দায়ী। তাই শাসক দলকে ছাড় দিয়ে এমন প্রস্তাবে রাজি নয় তারা। শেষ পর্যন্ত সহমতের ভিত্তিতে প্রস্তাব পেশ হবে, নাকি শাসক দলের জমা দেওয়া খসড়া প্রস্তাবই আলোচনার জন্য গৃহীত হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
মালদহের বৈষ্ণবনগরে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে সানাউল শেখ নামে এক যুবকের। বিধানসভায় সোমবার সেই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মোস্তাক আলম অভিযুক্তদের ফাঁসির পাশাপাশি মৃতের স্ত্রীর চাকরির দাবি করেন। মোস্তাকের অভিযোগ, আরএসএস ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। বৈষ্ণবনগরের বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকার ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। পরে বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় যে দু’জন ধরা পড়েছে, এক জন কংগ্রেস সমর্থক, অন্য জন তৃণমূলের। তা হলে বিজেপি কোথা থেকে আসছে!’’
মোস্তাকের বক্তব্যের রেশ ধরেই বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের রাজ্যে ধর্মগত কারণে খুন বা ঘরছাড়া হওয়ার নতুন প্রবণতার কথা তুলে বিধানসভায় সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী প্রস্তাব আনার দাবি জানান। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড বা দিল্লির রোগ পশ্চিমবঙ্গে দেখা যাচ্ছে।’’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাদের সঙ্গে নিয়েই সর্বদল প্রস্তাবে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে ১৮৫ ধারায় বেসরকারি প্রস্তাবের খসড়া জমাও দেওয়া হয়েছে।
পরে সভাকক্ষের বাইরে পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় কংগ্রেস ও বামকে শাসক দলের প্রস্তাবে সই করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা তাতে রাজি হননি। মান্নান এবং সুজনবাবু বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালাতে সর্বসম্মত আলোচনা চাই। কিন্তু এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার বাড়বাড়ন্তের পিছনে প্রশাসনিক দুর্বলতাও যে রয়েছে, তা-ও প্রস্তাবে রাখা হলে সর্বসম্মত আলোচনা হতে পারে। না হলে আমরা আমাদের প্রস্তাবেই আলোচনার দাবি জানাব।’’
বিরোধীদের এই দাবি মানা যে কার্যত অসম্ভব, তার ইঙ্গিত দিয়ে পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাই, বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করছেন, সকলে একত্রিত হয়ে কথা বলুন। কিন্তু বিরোধীরা তাতে রাজি না হলে শাসক দলের প্রস্তাবই বহাল থাকবে। তার উপরেই বিরোধীরা তাদের কথা বলবে।’’ আর বিজেপির মনোজবাবুর মন্তব্য, ‘‘বিপদে পড়ে তৃণমূল এখন বাম আর কংগ্রেসকে পাশে নিয়ে দেখাতে চাইছে, বিজেপি কত খারাপ! সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য আছে। সমস্যাটা আসলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে। সেই সমস্যা আড়াল করতে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়া হচ্ছে।’’