—প্রতীকী ছবি।
চার রাজ্যে চলতি বিধানসভা ভোটে সমঝোতা হয়নি। অন্যান্য রাজ্যেও সমস্যা মাথা চাড়া দিচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে তার জেরে আপাতত ‘দূরত্ব’ বাড়ছে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের।
আসন সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়েও রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে রফা হয়নি সিপিএমের। ওই তিন রাজ্যের পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়েও সিপিএম আলাদাই লড়ছে। এর পরে দলের পলিটব্যুরো সদস্য এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ইঙ্গিত দিয়েছেন, উত্তর-পূর্বের ওই রাজ্যে লোকসভা ভোটে তাঁরা একাই লড়তে চান। ওই রাজ্যে সমঝোতায় এখনও বিশেষ আগ্রহী নন কংগ্রেসের নেতৃত্বও। এর ফলে সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকলেও বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের বোঝাপড়া ছন্নছাড়া অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের উপরেই এই সমঝোতার পরবর্তী সমীকরণ নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের অভিমত। ওই রাজ্যগুলির ফল প্রকাশের পরে ফের নতুন করে আলোচনার কথা ভাবতে পারে সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষই।
বিজেপির বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে কংগ্রেস যেমন সারা দেশেই প্রার্থী দিয়ে লড়বে, সিপিএমের জন্য পরিস্থিতি অবশ্যই তেমন নয়। কিছু রাজ্যে কংগ্রেস-সহ অ-বিজেপি দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে লড়াই করতে চায় তারা। কিন্তু একাধিক রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ভিতরে কংগ্রেসের তরফে এক ধরনের ‘দাদাগিরি’র মনোভাব দেখা যাচ্ছে। যেখানে তাদের কিছুটা হলেও শক্তি রয়েছে, সেখানে কংগ্রেস অন্যদের জায়গা ছাড়ার ক্ষেত্রে ‘উদার’ অবস্থান নিচ্ছে না বলে সিপিএম নেতৃত্বের ক্ষোভ। চারটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটে যেমন দু’দলের আসন সমঝোতা হয়নি, তেমনই ত্রিপুরার সিপিএম মনে করছে, ৯ মাস আগে সে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করেও বিশেষ লাভ হয়নি। দলের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, কংগ্রেসের ভোট সর্বত্র বামেদের বাক্সে আসেনি। আবার কংগ্রেসেরও মত, বিধানসভা ভোটে এবং তার পরে দু’টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএমের ভূমিকা জোটের জন্য ‘মসৃণ’ ছিল না। এই পর্যালোচনার ভিত্তিতেই রাজ্যের দু’টি লোকসভা আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে লড়ার ক্ষেত্রে এখন অনীহা রয়েছে দুই শিবিরে।
বাংলার সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে তৈরি। তবে তার আগে বামফ্রন্টের শরিক এবং ফ্রন্টের বাইরের বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে পরিস্থিতি আলোচনা করে নিতে চাইছে তারা। এরই মধ্যে কংগ্রেস সম্পর্কে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কিছু মন্তব্যে দু’পক্ষের মধ্যে এক প্রস্ত ঠান্ডা লড়াইও হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করতে আমরা কংগ্রেস, আইএসএফের সঙ্গে আলোচনা করব। তার পরে বাকিটা দেখা যাবে।’’ সিপিএম ও কংগ্রেসের জন্য আর এক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কেরলে অবশ্য সমঝোতার প্রশ্ন নেই।
সিপিএম সূত্রের খবর, পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের পরে আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর দলের পলিটব্যুরো বৈঠকে রাজ্যভিত্তিক সমঝোতার সর্বশেষ পরিস্থিতি আলোচনা হবে। কংগ্রেসেরও এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘‘পাঁচ রাজ্যের আসন্ন ফলের উপরে পরবর্তী পদক্ষেপ অনেকটাই নির্ভর করবে।’’