RG Kar Rape and Murder Case

‘৭ মাস তদন্ত চলছে, কিন্তু কিছুই জানায়নি সিবিআই’! আদালতে অসন্তোষ প্রকাশ নির্যাতিতার বাবা-মায়ের

আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, সিবিআইয়ের তদন্তের কোনও অগ্রগতির বিষয়ে জানতে পারছেন না। তার পরই আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪২
Share:

শিয়ালদহ আদালতে সিবিআই তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে আবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সোমবার শিয়ালদহ আদালতে ধর্ষণ-খুনের মামলার শুনানিতে বিচারকের সামনে তাঁরা বলেন, ‘‘সিবিআই সাত মাস ধরে তদন্ত করছে। কিন্তু তারা আমাদের কিছুই জানায়নি।’’ সেই কথা বলতে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবার টেনে এনেছেন কলকাতা পুলিশের তদন্তের কথাও। তারা জানায়, এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশ পাঁচ দিন তদন্ত করেছিল। সেই সময় এক দিন তারা যোগাযোগ করেছিল। কী করছে, তা সব জানিয়েছিল।

Advertisement

আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগ ছিল, সিবিআইয়ের তদন্তের কোনও অগ্রগতির বিষয়ে জানতে পারছেন না। তার পরই আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল। সেই মোতাবেক সোমবার শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর মামলার তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। সেই শুনানিতে সিবিআই ছাড়াও আদালতে হাজির ছিলেন নির্যাতিতার পরিবার। সোমবারের রিপোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের ফোনের সিম কার্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনই তা ফেরত দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি, তারা এ-ও জানায়, খুব শীঘ্রই এই মামলায় অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেবে। তার পরই আদালত কক্ষে বিচারকের সামনে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁদের দাবি, ‘‘মামলার চার্জিশিটে মাত্র একটা পাতায় অভিজিৎ, সন্দীপদের (আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ) বিষয়ে জানিয়েছিল সিবিআই। তার পর আর সেই ব্যাপারে কিছুই জানতে পারলাম না।’’

নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগ, ‘‘সিবিআইয়ের লোকজন কোথায় আছেন, জানি না। তদন্তের কী অগ্রগতি হচ্ছে, তা-ও জানতে পারিনি। গত ১০ নভেম্বর তদন্তকারী অফিসারেরা বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু শুধু সমন দিয়ে চলে যান।’’ তার পরই তাঁরা বিচারককে জানান, বিচারপ্রক্রিয়া (ট্রায়াল) চলাকালীন তাঁদের (শুনানিতে) ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যা শুনে বিচারক নির্যাতিতার বাবা-মায়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা নিজেদেরকে ব্রাত্য ভাববেন না। ওখানে (এজলাসে) কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যা হয়েছে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। ধৈর্য ধরুন। সব জানতে পারবেন।’’

Advertisement

নির্যাতিতার বাবা বিচারককে বলেন, ‘‘আদালতের উপর আমাদের আস্থা আছে।’’ বিচারক জানান, প্রতি দিনের রিপোর্ট জানানো সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা পুলিশ, সিবিআই যে-ই তদন্ত করুক, সব জানানো যায় না। নিশ্চিন্তে থাকুন। সব জানতে পারবেন। সিবিআই যদি কোনও সিএফএসএল রিপোর্ট পায় বা কাউকে তলব করে, তা না-ও জানতে পারেন আপনারা। তবে কোনও কিছু মনে হলে আদালতে আবেদন করবেন।’’

সোমবার শুনানিতে বিচারকের সামনে নির্যাতিতার মা হাতজোড় করে ক্ষমা চান। যা দেখে বিচারক বলেন, ‘‘এ ভাবে কেন ক্ষমা চাইছেন? ক্ষমা চাইবেন না।’’ বিচারকের উদ্দেশে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘আদালতে কী ভাবে কথা বলতে হয় জানি না। আমার মেয়ে অন ডিউটি ডাক্তার ছিল। কেন এমন হল, তাঁর সঙ্গে কী ভাবে এমন ঘটল সেটাই আমরা জানতে চাইছি।’’ আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বলেন, ‘‘ওঁরা (নির্যাতিতার বাবা-মা) চিন্তিত রয়েছেন।’’ বিচারক শুনানি শেষে নির্যাতিতার বাবা-মাকে জানান, যদি কখনও কোনও অভিযোগ থাকে, তবে তা আইনজীবীর মাধ্যমে অবশ্যই আদালতে জানাতে পারবেন।

আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রথম থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে নির্যাতিতার পরিবার। এই মামলায় প্রথম যে চার্জশিট সিবিআই দেয়, তাতে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয় রায়কেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই চার্জশিট অনুযায়ী বিচারপ্রক্রিয়া এগোয় এবং শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে। তাঁকে আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পর সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তদন্তের গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাই কোর্ট, এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন করে নির্যাতিতার পরিবার। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, নির্যাতিতার পরিবারকে তদন্তের বিষয়ে অন্ধকারে রাখা হয়নি। এই মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে একাধিক রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সময়ে সময়ে অগ্রগতির কথা জানানো হয়েছে পরিবারের সদস্যদেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement