ভোর তখন ৩টে। আচমকা বাইরে দোমড়ানো-মোচড়ানোর মতো আওয়াজ। আলো জ্বালিয়ে ঘর থেকে লাঠি হাতে বেরোলেন সুমিত্রা সরকার। পরিবারের অন্যেরাও পিছনে পিছনে। ততক্ষণে খাঁচার ভিতর খরগোশগুলোও চিৎকার শুরু করেছে। বেশ কিছুক্ষণ খুঁজেপেতেও কাউকে দেখতে পাননি তাঁরা। পরে পায়ের ছাপ আর খাঁচার গায়ে আঁচড় দেখে তাঁদের আশঙ্কা হয়, চিতাবাঘ এসেছিল বাড়িতে। খবর পেতেই প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করেন।
সেই থেকে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন কোচবিহারের গুড়িয়াহাটি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামাপ্রসাদ কলোনির নতুনপল্লির বাসিন্দারা। সোমবার রাতে ওই ঘটনার পর মঙ্গলবারও দিনভর আতঙ্কে কেটেছে তাঁদের।
ওই পায়ের ছাপ চিতাবাঘের কিনা বন দফতর অবশ্য এখনও নিশ্চিত নয়। দফতরের কোচবিহারের রেঞ্জার সুরঞ্জন সরকার বলেন, “এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে এলাকায় নজরদারি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সুমিত্রা জানান, তাঁদের বাড়িতে উঠোনের মধ্যে একটি বড় খাঁচা রয়েছে। লোহা ও কাঠ দিয়ে তৈরি ওই খাঁচায় বেশ কয়েকটি খরগোশ রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চোখে দেখিনি। কিন্তু চারদিক যেভাবে লন্ডভন্ড হয়েছে তা আতঙ্কের। গাছের ডাল পর্যন্ত ভেঙেছে। খরগোশের বিশাল খাঁচাটা টেনে অনেকটা সরিয়েও দেওয়া হয়।”
আরও পড়ুন: লাইনে ৩টি দেহ, পাশে তাজা রক্ত
চিহ্ন: এই পায়ের ছাপেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
কোচবিহার শহর থেকে বড়জোর দশ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে পড়ে এই এলাকা। স্বাভাবিক ভাবেই চিতাবাঘের আতঙ্কের রেশ পড়েছে শহরেও।
ওই গ্রামের বাসিন্দা বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যা চন্দনা বর্মন, “একটা আতঙ্কের মধ্যে আছি আমরা। সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে দিচ্ছি না। চিতা না অন্যকিছু তা বুঝতে পাচ্ছি না। কিন্তু পায়ের ছাপ দেখে আমাদের খুব সন্দেহ হচ্ছে।” গ্রামের আরেক বাসিন্দা কোকিলেশ্বর বর্মন বলেন, “দিনেরবেলা কাজের জন্য সবাই বাড়ির বাইরে থাকি। শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয় হচ্ছে। বন দফতর ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।”
আরও পড়ুন: দেরিতে সুবিচার, এখন আর কী হবে