রাজ্য সরকার জবরদখল তোলার দায়িত্ব না-নিতে চাওয়ায় তিন বছর আগে ৩৫ নং জাতীয় সড়ক চওড়া করার কাজ শুরু করেও বন্ধ করে দিয়েছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ)। কেন্দ্র-রাজ্য বোঝাপড়ার নতুন পরিসরে এ বার সেই কাজই ফের শুরু হতে চলেছে। বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি ৪ লেন করা হবে। দু’ধারে এ’টি চওড়া হবে প্রায় দশ মিটার। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্ক বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, রাস্তা চওড়া করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। পূর্ত দফতরের হাতে যে জমি রয়েছে, সেটাই কাজে লাগানো হবে। এই রাস্তার দু’ধারে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গাছ রয়েছে, যেগুলির বয়স একশো-দেড়শো বছর। রাস্তা চওড়া করতে হলে প্রায় সব গাছই কাটা পড়বে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও উত্তর ২৪ পরগনার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, সাধারণ ভাবে একটি গাছ কাটলে দশটি গাছ লাগানোর কথা। সেই হিসাবে ৩৫ হাজার গাছ লাগালেই হয়। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, গোটা রাস্তা ও তার আশপাশের এলাকায় মোট এক লক্ষ গাছ লাগানো হবে।
দীর্ঘ পথের বহু জায়গায় সরকারি জমি জবরদখল করে নানা ধরনের নির্মাণ রয়েছে। রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি হল, উন্নয়নের কাজ হলেও সাধারণ ভাবে কোনও মানুষকে উচ্ছেদ করা যাবে না। একান্ত যদি করতেই হয়, তা হলে আগে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নবান্নের খবর, ২০০৭ সালে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ৩৫ নং জাতীয় সড়ক ৪ লেন করার পরিকল্পনা করে। সমীক্ষার কাজও শুরু করে। কিন্তু চার লেনের রাস্তা তৈরি করতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে বহু জবরদখলকারীকে। ওই সময় উচ্ছেদ-অভিযানের বিরুদ্ধে পথে নামে তৃণমূল। অভিযোগ তার জেরে ২০১২ সালে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
তা হলে এ বার উচ্ছেদ ছাড়াই কী ভাবে রাস্তা চওড়া হবে? খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, গোটা রাস্তায় মাত্র পাঁচটি জায়গায় জবরদখল রয়েছে। এগুলি হল— বারাসত-কাজিপাড়া, অশোকনগর রেলগেট, হাবড়া ১ এবং ২ নম্বর গেট এবং বনগাঁ। ঠিক হয়েছে, সমস্যা সমাধানে ওই পাঁচ জায়গায় উড়ালপুল তৈরি করা হবে। ফলে কোনও দখলকারীকে উচ্ছেদ করতে হবে না। যদিও এই দাবি নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রশাসনের একাংশের মধ্যেই।
নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা পর্যালোচনা বৈঠকে গেলে বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত রাস্তাটি চওড়া করার প্রসঙ্গ ওঠে। রাস্তাটি চওড়া করা গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়। তখনই মুখ্যসচিবকে বিষয়টিকে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। সেই সূত্রেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ দিন মুখ্যসচিব, পূর্ত দফতরের কর্তারা, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিধায়ক ও সাংসদ এবং খাদ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন।
নবান্নের এক কর্তা জানান, এ দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফের নতুন করে সমীক্ষা হবে। কত খরচ হবে, তা সমীক্ষার পরেই চূড়ান্ত হবে। এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থই দেবে কেন্দ্র।