ভোট-পর্বে বদলি হওয়া পুলিশ-প্রশাসনের সব কর্তাকে ফেরানোর কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন সরকার গড়ার পরে সেই মতো পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার পদে ফিরেছেন ভারতী ঘোষ। ভারতী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পুলিশ কর্তারাও এ বার জেলায় ফিরছেন।
সম্প্রতি খড়্গপুরের দুই পুলিশ- কর্তার বদলি নিয়ে কম জল্পনা হয়নি। এ বার খড়্গপুরে তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে। এই কেন্দ্রে জিতেছে বিজেপি। একাংশ পুলিশ-কর্তার বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার নালিশ এনেছিল তৃণমূলের একাংশ। পরে খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল এবং টাউন থানার আইসি মহম্মদ ওমর ফারুককে সরিয়ে দেওয়া হয়। মমতার জেলা সফরের পরই ওই নির্দেশ জারি হয় বলে পুলিশের এক সূত্রে খবর। কার্তিকচন্দ্রবাবুর বদলি হয়েছে সিআইএফ-এ। ওমর ফারুকের বীরভূমে। খড়্গপুরের এসডিপিও হয়ে ফিরেছেন সন্তোষকুমার মণ্ডল। টাউন থানার আইসি হয়ে ফিরেছেন জ্ঞানদেওপ্রসাদ সাউ। ভোটের আগে দু’জন এখানেই ছিলেন।
ভোটপর্ব মিটতে জেলায় ফিরেছেন আরও কয়েকজন পুলিশ- কর্তা। ফিরেছেন ডেপুটি পুলিশ সুপার মনোরঞ্জন ঘোষ, এসডিপিও বিবেককুমার ভার্মা, আইসি সুশান্ত রাজবংশী। ভোটের আগে সুশান্তবাবু মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার আইসি ছিলেন। তিনি সেখানেই ফিরেছেন। কোতোয়ালির আইসি বিশ্বজিৎ সাহা গিয়েছেন শালবনিতে। পুলিশের অবশ্য দাবি, সব রুটিন বদলি।
বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরপরই এক ধাক্কায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ পুলিশ- কর্তাকে সরিয়ে দেয় মমতার সরকার। প্রায় ৫০ জন আইপিএস অফিসারের বদলি হয়েছে। পরে থানাস্তরেও রদবদল শুরু হয়। সেই সূত্রেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারেরও দায়িত্ব পেয়েছেন ভারতীদেবী। ভোটের আগে আগে জেলা ছেড়ে চলে যাওয়া সেই সব পুলিশ- কর্তাদের একাংশ ফিরছেন, যাঁরা ভারতীদেবীর ‘গুড বুকে’ আছেন। একাধিক মহলের দাবি, জেলায় ফিরেই চেনা ছন্দে ব্যাটিং শুরু করেছেন ভারতীদেবী। নিজের
মতো করে দল তৈরি করছেন। যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ভারতীদেবী।
যদিও পুরনো অফিসারদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে পুলিশ- প্রশাসনকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “এ জেলার পুলিশ- প্রশাসন শাসক দলের নির্দেশেই চলে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। তাই কে গেলেন, কে এলেন সেটা বড় ব্যাপার নয়!” তাঁর আরও অভিযোগ, “ইদের আগে ঘরছাড়া মুসলিম কর্মী-সমর্থকেরা ফিরতে চেয়েছিলেন। পুলিশ ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থাই করেনি।” বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলেরও কটাক্ষ, “পুলিশকর্তা বা কর্ত্রীর আস্থাভাজন কিছু অফিসার থাকেই। কর্তা বা কর্ত্রীরা ফিরে
এলে তাঁরও ফেরানোর চেষ্টা হয়।
এতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আশঙ্কাও থেকে যায়!”
শাসক দল অবশ্য পুলিশের বদলি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, “এটা পুলিশের নিজস্ব ব্যাপার।”