চিকিৎসাধীন: এনআরএসে সৃজল রাই। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ঘর সারানো হচ্ছে। তাই সংক্রমণের আশঙ্কা সত্ত্বেও কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বারান্দাতেই আপাতত চিকিৎসা চলছে কালিম্পঙের সৃজল রাইয়ের। প্রায় এক মাসের চেষ্টায় ৮ বছরের শিশুটি এখন আগের তুলনায় কিছুটা সুস্থ। কিন্তু, অসাড় পায়ের সাড় ফিরিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে অন্তত আরও মাসখানেক। এ দিকে হাত একেবারে শূন্য সৃজলের বাবা রমেশের। কী ভাবে চলবে আরও এক মাস? তা ভেবেই রাতের ঘুম চলে গিয়েছে পেডঙের কাগজি বস্তির বাসিন্দা রমেশ রাইয়ের।
ছেলেকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকে তার শয্যার পাশেই দিন কাটছে রমেশের। কয়েকজন শুভার্থীর দেওয়া টাকায় দু’বেলা কোনও মতে ডাল-রুটি খাচ্ছেন। সেই টাকাও ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। অসহায়তায় তাই জলের ধারা তাঁর দু’চোখে। বলছেন, ‘‘ টাকা ফুরিয়ে এসেছে। কলকাতায় কেউ নেই আমার। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় কি? সেখানে চেনাজানাদের ঘরে দু’মুঠো খেয়ে ছেলের চিকিৎসা করাব।’’
প্রান্তিক চাষি রমেশের অবস্থা বুঝতে পেরে এনএরআরএসের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কয়েকজন তাঁকে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শিশু ও তার বাবাকে দেখেছেন সকলে। সেই সময়ে সৃজলকে নিয়ে গোটা রাজ্যেই হইচই হয়েছিল। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া জোগাড় করতে না পারায় শিশুটিকে ‘রেফার’ করা হলেও কলকাতায় নিতে পারছিলেন না রমেশ। সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পরদিনই কয়েকজন শুভানুধ্যায়ীর সহায়তায় এনআরএসে ভর্তি করানো হয় শিশুটিকে। অনেকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাসও দেন রমেশকে।
এখানে চিকিৎসা করিয়ে ঘায়ের পচন অনেকটাই কমানো হয়েছে। মলদ্বারে ছোট্ট অস্ত্রোপচারও হয়েছে। এখন মাসখানেক ফিজিওথেরাপির পরে পায়ের সাড় কিছুটা ফেরানো গেলে প্লাস্টিক সার্জারি করানো হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এনআরএসের প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান কোলিন রায় বলেন, ‘‘শিশুটি আগের চেয়ে সুস্থ। তবে দুটি পা প্রায় অসাড়। ফিজিওথেরাপি চলছে। তা সম্পূর্ণ হলেই অস্ত্রোপচার করা যাবে।’’ তাই গত সপ্তাহ থেকে সৃজলকে প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সংস্কারের জন্য বারান্দায় খোলা জানালায় পর্দা টাঙিয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে। যেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে বলে চিকিৎসকেরাও মনে করেন।
কিন্তু, এমন ঘা-পচন রয়েছে যার তাকে করিডোরে রেখে চিকিৎসা করানো কতটা যুক্তিযুক্ত তার উত্তরে বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘‘ঘর সারানো হচ্ছে বলে চিকিৎসা বন্ধ রাখা যাবে না। তবে সংক্রমণ যাতে না হয় সে জন্য সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।’’ তবে বিভাগীয় প্রধান এটাও মনে করেন, একে তো ভাষা বোঝার সমস্যা, উপরন্তু টাকা না থাকায় রমেশের অবস্থা খুব খারাপ। তাঁর পরামর্শ, ‘‘ফিজিওথেরাপি ও অন্য যে চিকিৎসা চলছে তা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেই হতে পারে। আপাতত সেখানে রেখে কিছুটা সাড় ফিরিয়ে অস্ত্রোপচারের জন্য পাঠানোই ভাল।’’