ছবি পিটিআই।
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর কথা জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অর্থনীতিবিদদের অনেকের বক্তব্য, এতে রাজ্যেরও রাজস্বে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের অভিযোগ, প্রতিবাদের মুখে মাথা ঝোঁকাতেই হল কেন্দ্রকে। কিন্তু যে পরিমাণ দাম কমানো হল, আগুন বাজারদরের সামনে তা কিছুই নয়।
যদিও এ দিনই কেন্দ্র স্পষ্ট করে দিয়েছে, তাদের এই পদক্ষেপে রাজ্যের রাজস্বে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। জ্বালানির দাম কমিয়ে শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী টুইটে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারগুলিও এমন ছাড় দিয়ে মানুষকে স্বস্তি দিক। এ দিনই কেরল সরকার পেট্রল-ডিজ়েলের উপর তাদের কর কমানোর কথা ঘোষণা করেছে। কেরল সরকার জানিয়েছে, পেট্রলে ২.৪১ টাকা এবং ডিজ়েলে ১.৩৬ টাকা কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে এটা এই রাজ্য সরকারের উপর চাপ আরও কিছুটা বাড়াল।
তবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “সমুদ্র থেকে এক বিন্দু কমিয়ে লাভ কী! কেন্দ্র এই দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে কারণ, মুখ্যমন্ত্রী এর কড়া প্রতিবাদ করেছিলেন।”
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্যকে তেলের করে ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, ২০১৪-২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেট্রল-ডিজ়েল থেকে ১৭ লক্ষ ৩১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে মোদী সরকার।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের কথায়, “কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও বলব, এই প্রায়শ্চিত্ত তাদের করতেই হত।” অভিরূপবাবুর মতে, কেন্দ্র এক্সাইজ়ে ডিউটিতে ছাড় দেওয়ায় এর প্রভাব পড়বে রাজ্যগুলির উপরেও। কারণ, একেকটি রাজ্যে জ্বালানি তেলের উপর একেকরকম এক্সাইজ় ডিউটি বসানো রয়েছে। এ রাজ্যে তা মোটামুটি ২৫%-র মতো। ফলে কেন্দ্রের ৮ টাকা এক্সাইজ় ডিউটি ছাড় দেওয়ার প্রভাবে ২৫%-এর হিসাবে জ্বালানি তেল বাবদ রাজ্যের রাজস্ব থেকে এমনিতেই অন্তত ২ টাকা কার্যত বাদই যাবে।
অবশ্য পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক জানায়, শুল্কের মধ্যে যে সড়ক ও পরিকাঠামো সেস নেওয়া হয় তার অংশ থেকেই শুল্ক কমানো হচ্ছে। ফলে মূল শুল্কের যে অংশটা রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করা হয়, তাতে ধাক্কা লাগবে না। ফলে শুল্ক ছাঁটাইয়ের ফলে যে রাজস্ব ক্ষতি পুরোটাই বহন করবে কেন্দ্র। রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি হবে না।
রাজ্যের অর্থ কর্তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কেন্দ্র যে রাজস্ব ক্ষতির কথা প্রচার করছে, সেই প্রভাব থেকে বাদ নেই এ রাজ্যও। কারণ, অনেক দিন আগে থেকেই প্রতি লিটার পেট্রল-ডিজ়েলে এক টাকা করে ছাড় দিয়ে আসছে রাজ্য। অন্যদিকে সেস বাবদ যে টাকা কেন্দ্র সংগ্রহ করে, তার কোনও ভাগ আসে না রাজ্যে। উপরন্তু, রাজ্য কেন্দ্রের থেকে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা পায়। সেই বকেয়া কেন্দ্র মিটিয়ে দিলে বরং তেলে কর ছাড় দেওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে সহজ হত।