তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ এবং গোপাল দলপতি। ফাইল চিত্র।
মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে গোপাল দলপতি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে টাকা দেওয়া, টাকা দেওয়ার সাক্ষী হওয়া থেকে শুরু করে যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বিভিন্ন বক্তব্য অস্বীকার করেছেন বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের দাবি। ইডি-র অভিযোগ, তদন্তকারীদের লাগাতার বিভ্রান্ত করে বিপথে চালিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কুন্তল। মঙ্গলবারেও দীর্ঘ প্রশ্ন পর্বে গোপাল যখন সরাসরি ওই যুব নেতার বক্তব্য খণ্ডন করতে থাকেন, সেই সময় কুন্তলের চিৎকারে বার বার নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘গোপাল জিজ্ঞাসাবাদে পার্থকে টাকা না-দেওয়ার কথা বলায় নতুন করে ধন্দ তৈরি হয়েছে। তা হলে ৩০ কোটি টাকা কোথায়, কী ভাবে পাচার করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ গোপাল তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থকে টাকা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করতেই ‘তাপসকে টাকা দেওয়া হয়েছে’ বলে চিৎকার শুরু করে দেন কুন্তল। এ ভাবেই ওই যুব নেতা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ।
বুধবার প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত তৃণমূলের অন্য যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুন্তলের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রশ্ন করা হয়েছে কুন্তল ও শান্তনুর মোবাইলের সূত্র ধরে। শান্তনু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের আয়কর রিটার্ন, সম্পত্তির নথিও যাচাই করা হচ্ছে।
ইডি জানিয়েছে, গ্রেফতারের পরে কুন্তল দাবি করেছিলেন, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থকে তিনি সাড়ে ১৫ কোটি টাকা দিয়েছেন এবং সেই টাকা লেনদেনের অন্যতম সাক্ষী গোপাল। মঙ্গলবার সেই গোপালকে নিয়ে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র আঞ্চলিক দফতরে যান বেসরকারি কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডল। ইডি-র দাবি, কুন্তল, গোপাল ও তাপসকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন সংশ্লিষ্ট সকলের সামনে গোপাল জানান, পার্থের কাছে তিনি কোনও দিনই কোনও টাকা পৌঁছে দেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তার পরেই কুন্তল আচমকা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘গোপালদা, তুমি বলো। তাপস তোমার সামনেই আমার কাছ থেকে দশ কোটি টাকা নিয়ে কলেজ তৈরি করেছেন।’ তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, কুন্তলের ওই দাবিও নস্যাৎ করে দিয়েছেন গোপাল। তাপস ও কুন্তলের সামনে বসে গোপালের দাবি, ২০১৬ সালে তাপস মারফত কুন্তলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের নির্দেশে তিনি নানা কাজ করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুন্তল বেশ কয়েক বার তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট চার-পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই লেনদেনের নথি তাঁর কাছে আছে। তদন্তকারীদের দাবি, মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং বিষয়সম্পত্তির যাবতীয় নথি জমা দিতে বলা হয়েছে গোপালকে।