কুন্তল ঘোষ। প্রতীকী ছবি।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তিনি রাজসাক্ষী হবেন কি না? বৃহস্পতিবার পাল্টা প্রশ্নে তার জবাব দেন ওই মামলায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ, “আমি রাজসাক্ষী হতে যাব কেন?”
কুন্তল ছাড়াও মিডলম্যান নীলাদ্রি ঘোষ, বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপস মণ্ডলকে এ দিন আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয়। সোমা চক্রবর্তী নামে এক মহিলা এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে কুন্তল আদালতের বাইরে বলেন, “তদন্তকারী অফিসারেরা সব বার করবেন।” তখনই রাজসাক্ষী সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয় শাসক দলের ওই যুবনেতাকে।
বিশেষ আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় এ দিন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় উঠে আসা সরকারি আধিকারিকদের বয়ান সাক্ষ্যের আকারে লিপিবদ্ধ করার জন্য তদন্তকারী অফিসারকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রে পৌঁছতে হলে আইনি পদ্ধতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে। কয়েক জন মিড্লম্যানকে জেলে রাখলে তদন্তের অগ্রগতি হবে না। কুন্তল, নীলাদ্রি ও তাপসকে ফের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এ দিন শুনানি চলাকালীন বিচারক তদন্তকারী অফিসারের কাছ থেকে কেস ডায়েরি চেয়ে নেন। তা খতিয়ে দেখে বিচারক প্রশ্ন করেন, “সরকারি আধিকারিকদের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে না কেন? দুর্নীতির ঘটনার সাক্ষী তাঁরাও। এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং সেটা করতে হবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তবেই তা আদালতগ্রাহ্য হবে।”
সিবিআইয়ের আইনজীবী কোর্টে বলেন, “এটি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। কয়েক জন সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সাক্ষীরা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে ধরা পড়েছে। তাই সতর্ক হয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। তবে এই দুর্নীতির এক জন ষড়যন্ত্রকারী সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন।”
কুন্তলের আইনজীবী এ দিন দাবি করেন, “আমার মক্কেল তদন্তে সহযোগিতা করছেন। জেলে থাকলেও সেখানে গিয়ে সিবিআই জেরা করছে না।” এই পরিস্থিতিতে কুন্তলের আইনজীবী যে-কোনও শর্তে তাঁর মক্কেলের জামিনের আর্জিও জানান। নীলাদ্রির আইনজীবী দাবি করেন, তাঁর মক্কেলকে তাপস ও কুন্তলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বলা হলেও তার কোনও প্রমাণ নেই। সিবিআই মাত্র চার দিন তাঁকে হেফাজতে রেখেছিল। বর্তমানে জেলে নীলাদ্রিকে কোনও জেরা করা হচ্ছে না। তাই তাঁকেও জামিনদেওয়া হোক। তাপসের আইনজীবীর বক্তব্য, তাঁর মক্কেল অসুস্থ। এফআইআরে নামও ছিল না। তদন্তেও সহযোগিতা করেছেন। তাই জামিন দেওয়া হোক।
ওই তিন জনকে জেলে জেরার ব্যাপারে সিবিআই কিছু না-বললেও জেল হাজতে থাকা এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ ও মিড্লম্যান আব্দুল খালেককে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে জেরা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে সিবিআই। সম্প্রতি তারা শান্তিপ্রসাদের একটি ফ্ল্যাট থেকে ৫০ লক্ষ টাকা, সোনার গয়না, কমবেশি দেড় হাজার চাকরিপ্রার্থীর নামের তালিকা এবং তাঁদের বহু সম্পত্তির দলিল উদ্ধার করেছে। তদন্তকারীদের দাবি, খালেকের বয়ানের ভিত্তিতে শান্তিপ্রসাদের ফ্ল্যাটে টাকা-গয়নার হদিস পাওয়া গিয়েছে। তাই জেলে মুখোমুখি জেরা প্রয়োজন। সোমবার এই আবেদনের শুনানি হবে।