Recruitment Scam

মানিক-জোড়ে কুন্তলও মাথা চক্রের, কোর্টে দাবি ইডি-র

মানিক-কুন্তল অবৈধ নিয়োগ চক্রের অন্যতম মাথা বলে অভিযোগ করে ইডি-র তরফে জানানো হয়েছে, বাঁকা পথে নিয়োগের রাশ অনেকটাই ছিল ওই দু’জনের হাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১০
Share:

দুর্নীতিতে মানিক-কুন্তল জুটির ভূমিকা বেশ বড়। ফাইল চিত্র।

প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ওই চক্রের অন্য ‘মাথাদের’ কথা তুলেছিলেন। যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা পার্থের কাছে পৌঁছে দিতেন বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি। ইডি-র তরফে বুধবার বিচার ভবনের আদালতে জানানো হয়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও কুন্তলের যোগাযোগ ছিল এবং ওই দুর্নীতিতে মানিক-কুন্তল জুটির ভূমিকা বেশ বড়। মানিক-কুন্তল অবৈধ নিয়োগ চক্রের অন্যতম মাথা বলে অভিযোগ করে ইডি-র তরফে জানানো হয়েছে, বাঁকা পথে নিয়োগের রাশ অনেকটাই ছিল ওই দু’জনের হাতে। তবে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মানিক, কুন্তলেরা দুষ্টচক্রের ‘নাটবোল্টু’, ধরতে হবে ‘মাথা-সমেত’ পুরো চক্রটাকেই।

Advertisement

এ দিন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় মানিকের জামিনের বিরোধিতা করে ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘কুন্তলকে জেরা করে মানিকের সম্পর্কে অনেক তথ্য উদ্ধার করা গিয়েছে। এর আগে মানিকের বাড়ি থেকে কমবেশি আড়াই হাজার অযোগ্য প্রার্থীকে প্রাথমিকস্কুলে চাকরি দেওয়ার নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। নিয়োগ পরীক্ষার বেশ কিছু ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্র পাওয়া গিয়েছে কুন্তলের ফ্ল্যাটেও। সেই উত্তরপত্রে ঠিক উত্তরের জায়গায় সাঙ্কেতিক চিহ্ন দেওয়া আছে।’’

ইডি-র দাবি, মানিকের সঙ্গে যোগসাজশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চক্র চালাতেন কুন্তল। মানিক রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক, রীতিমতো প্রভাবশালীও। ইডি-র আইনজীবীদের দাবি, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি আড়ে-বহরে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থা সারদা, রোজ় ভ্যালির আর্থিক কেলেঙ্কারির থেকেও অনেক বড়। শেক্সপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের ডাইনিদের বিখ্যাত সংলাপ ছিল ‘ফেয়ার ইজ় ফাউল অ্যান্ড ফাউল ইজ় ফেয়ার।’ সেই সংলাপ উদ্ধৃত করে ওই আইনজীবীরা বলেন, ‘‘মানিক-কুন্তলদেরও ভাল-মন্দের বোধ নেই। তাঁরা নিজেরাই জানেন না, নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজের কত বড় ক্ষতি করেছেন। একের পর এক প্রজন্মের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছেন। এক সময় ভিন্‌ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা বাংলায় আসতেন। এখন পরিস্থিতি উল্টো হয়ে গিয়েছে। ভিন্‌ রাজ্যে যেতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়াদের। সামাজিক অবক্ষয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন এঁরা।’’

Advertisement

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তকারী অফিসার এ দিন আদালতে দাবি করেন, মানিকের বাড়ি থেকে অযোগ্য প্রার্থীদের নামের যে-তালিকা ও সুপারিশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে নাম থাকা অধিকাংশ প্রার্থীই নিয়োগপত্র পেয়েছেন। অভিযোগ, উত্তরপত্র বিকৃত করেই ওই সব প্রার্থীর নিয়োগ হয়েছে। এবং সেই কর্মকাণ্ডে কুন্তলের সঙ্গে মানিকের নানা যোগসূত্র উঠে এসেছে। মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থা পরোক্ষ ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তদন্ত কত দিন চলবে, তার কোনও সময়সীমা নেই। তাই যে-কোনও শর্তে মানিকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হোক।’’

সেই আবেদন খারিজ করে ১৪ মার্চ পর্যন্ত মানিককে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ দিন মানিককে আদালতে তোলা হয়নি। ইডি-র অন্যতম আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘শুধু জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। মঙ্গলবারেই মানিককে আদালতে তোলা হয়েছে।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেন, ‘‘মানিক, কুন্তল বা এই ধরনের আরও যে-সব নাম আসছে, সেগুলো সবই দুর্নীতি-তন্ত্রের মূল যন্ত্রের এক-একটা নাটবোল্টু। আমরা দুর্নীতির যন্ত্রটাকে উপড়ে ফেলার কথা বলছি। শুধু নানা রকম তথ্য দিয়ে গেলে চলবে না, মাথা-সমেত যন্ত্রটাকে ধরতে হবে!’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘কোনও ভুল হয়ে থাকলে আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি। কিন্তু এ-সব কথা কি সিপিএমের মুখে মানায়? ত্রিপুরায় সিপিএমের আমলে নিযুক্ত ১০,৩২৩ জনের চাকরি গিয়েছে আদালতের নির্দেশে। তাঁরা রাস্তায় বসে ধর্না দিচ্ছেন। এর জন্য ওদের দলের কয়েক জন সাসপেন্ডও হয়েছে। নিয়োগ, স্বজনপোষণ তো ওদের অভ্যাস! ওরা কোন মুখে এত বড় বড় কথা বলছে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement