Recruitment Scam

দুর্নীতির বোড়ে যুব কর্মীদের উপরেই নজর

নিয়োগ দুর্নীতির দৌলতে তাঁরাই এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক! তাঁদের উপরেই আপাতত নজর সংহত করছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই।

Advertisement

  শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৮
Share:

সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

রাজ্যে পরিব্যাপ্ত নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁরা চক্রীদের বোড়ে বা হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছেন বলে তদন্ত সংস্থার দাবি। সেই সঙ্গে তদন্তকারীদের অভিযোগ, নিছক বোড়ে হয়েই থেমে থাকেননি শাসক দলের সেই যুব শক্তির একাংশ, বাঁকা পথে নিয়োগের খেলা বুঝে নিয়ে তাঁরাও নিজেদের পকেটে টাকা ভরেছেন দু’হাতে। অথচ বছর দশেক আগেও তাঁরা ছিলেন সাধারণ, অতি সাধারণ। কেউ ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী, কেউ বা রোজগারহীন। নিয়োগ দুর্নীতির দৌলতে তাঁরাই এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক! তাঁদের উপরেই আপাতত নজর সংহত করছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই।

Advertisement

তাঁরা ঠিক কারা?

নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের অভিযোগ, এই যে ছাপোষা, সাধারণ মানুষগুলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন, তাঁদের বড় একটা অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের যুব দলের সদস্য। রাজ্যের প্রায় সব জেলার একেবারে ব্লক স্তর থেকে জেলা সংগঠনের যুব নেতা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠেরা যে প্রধানত মিড্‌লম্যানের কাজ করতেন, প্রাথমিক তদন্তে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

Advertisement

উদাহরণ দিয়ে সিবিআইয়ের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে সম্প্রতি ধৃত কুন্তল ঘোষ, শাহিদ ইমাম, তাঁর ভাই আলি ইমাম, আব্দুল খালেক— সকলেই শাসক দলের যুব সংগঠনের কোনও না কোনও পদে ছিলেন বা আছেন। সিবিআই-কর্তাদের দাবি, এঁদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি সংগঠিত করেছেন। কেউ আবার দুর্নীতির মাথাদের হয়ে মিড্‌লম্যানের কাজ করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। কুন্তল-সহ ধৃতদের স্ফীত ব্যাঙ্ক আমানত আর অন্যান্য সম্পত্তি সেই আঁধার পথে উপার্জনেরই প্রমাণ বলে তদন্তকারীদের দাবি।

সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেই কাজে রাজ্য জুড়ে যুব নেতাদের ব্যবহার করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী, ওই যুব নেতাদের মাধ্যমে এক দিকে কোটি কোটি টাকা লুট করা হয়েছে, তেমনই বড় অঙ্কের টাকা পকেটে পোরার সুযোগ পেয়েছেন যুব নেতারাও।

কুন্তলদের পাশাপাশি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অন্য যাঁদের নাম তদন্তে উঠে এসেছে, সিবিআই-কর্তাদের দাবি অনুযায়ী, তাঁদেরও বড় একটি অংশ শাসক দলের যুব শাখার সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “২০১২ সাল থেকেই দুর্নীতির এই জালের বিস্তার শুরু হয়েছিল। এবং সেই জাল যে শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রের অবৈধ নিয়োগেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। রাজ্য সরকারের অন্য দফতরেও বাঁকা পথের নিয়োগে রয়েছে সেই জালের কেরামতি। রাজ্য সরকারের কর্মী-অফিসারদের অনেকেই যে এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, ইতিমধ্যে সেই আভাসও পেয়েছি আমরা।”

এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে কমবেশি সাড়ে চারশো মিড্‌লম্যান এখন তদন্তকারীদের আতশ কাচের নীচে। এবং সেই মিডলম্যানদের অধিকাংশই ছোট-বড়-মাঝারি মাপের যুব নেতা।’’

সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তার অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিতে অপরাধ সংঘটিত করে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, দুর্নীতিতে নয়ছয় হওয়া টাকার অঙ্কও বাড়ছে। হয় কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লুট করা হয়েছে অপরিমিত অর্থ। সিবিআইয়ের দাবি, শেষ পর্যন্ত ওই মিড্‌লম্যান, যুব নেতাদের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পৌঁছে গিয়েছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে।

গত মঙ্গলবার কুন্তল, তাপস মণ্ডল, নীলাদ্রি ঘোষ ও গোপাল দলপতিকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময়েও মিড্‌লম্যান হিসেবে আরও বেশ কিছু যুব নেতার নাম উঠে এসেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। নিয়োগ দুর্নীতিতে লুটের টাকা লেনদেনে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। চাকরি বিক্রির লুটের টাকা কুন্তলের মাধ্যমে গোপাল ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রীর একটি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে বলেও তদন্তকারীদের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement