ফাইল ছবি
হাওড়ায় ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে সেই মামলাতেই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করলেন, পশ্চিমবঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ কার্যত বন্ধ রাখা উচিত। নিছক মন্তব্য নয়, এজি জানান, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ আপাতত বন্ধ রাখার সুপারিশও করেছেন তিনি।
তদন্ত এবং এই মামলায় রাজ্য সরকারের তরফে সওয়ালের গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকেই মনে করছেন, আনিসের মৃত্যুর দায় কার্যত সিভিক ভলান্টিয়ারদের উপরেই চাপিয়ে দিতে চাইছে সরকার। এ দিনেও এজি-র সওয়ালে পুলিশের গাফিলতির কথা উঠে এসেছে। তবে আনিস মামলায় রাজ্য পুলিশের ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দল এখনও পর্যন্ত এক সিভিক ভলান্টিয়ার এবং এক জন হোমগার্ড ছাড়া কোনও পুলিশকর্মীকে গ্রেফতার করেনি।
এজি নিজে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ বন্ধের সুপারিশ করলেও তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশ মহলেই। কারণ, বেশির ভাগ সিভিক ভলান্টিয়ারকে রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হয় বলেই অভিযোগ। আর এই কারণে নিজেদের সর্বশক্তিমান ভাবেন তাঁদের অনেকেই।
তাঁদের এই মনোভাবের ক্ষতিকর প্রভাব পুলিশ বাহিনীতে পড়ছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের একটি থানার আইসি জানান, সিভিক ভলান্টিয়ারেরা কোনও ভুল করলে তাঁদের শাস্তি দেওয়ার কোনও পদ্ধতি নেই। আর এটা জেনেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তাঁরা।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। খাস কলকাতায় এক অভিযুক্তকে ধরার নামে তাঁর বুকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। আবার কিছু দিন আগেই বিধাননগরে এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পুলিশ বাহিনীর একাধিক অফিসার বলেন, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কোনও প্রশিক্ষণ দিয়ে বাহিনীতে আসতে হয় না।
রাজ্য পুলিশের এক ডিআইজি বলেন, ‘‘সিভিক ভলান্টিয়ারেরা সব জায়গায় নিয়মিত কাজে আসে না। কিন্তু তাঁদের কিছু বলার ক্ষমতা নেই কারও। এতে বাহিনীর শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। শুধু নিয়োগ বন্ধ নয়, বাহিনীকে সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য পুলিশের নিচু তলার কর্মীদের মতো সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
তবে পাল্টা অভিযোগ হল, নামমাত্র বেতনে চুক্তিভিত্তিক এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে সব কাজই করান পুলিশকর্তারা। তার পরে কোনও ত্রুটি হলে এঁদের ঘাড়েই দোষ চাপানো হয়। প্রশিক্ষণহীন এই কর্মীদের দিয়ে কেন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করানো হবে, তার উত্তর রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তাদের দেওয়া উচিত বলেও মনে করছেন কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকে। বর্তমানে রাজ্য পুলিশে অন্তত এক লক্ষ কুড়ি হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার কর্মরত আছেন। এর বাইরে কলকাতা পুলিশেও রয়েছেন আরও কয়েক হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার।
বেশ কিছু পুলিশকর্তার বক্তব্য, সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগে রাশ টানতে চাইছে রাজ্য সরকার। এক পুলিশকর্তা জানান, প্রতিটি জেলায় সিভিক ভলান্টিয়ারেরা বাহিনীর শিরা-উপশিরায় পরিণত হয়েছেন। থানা থেকে ট্র্যাফিক গার্ড, সর্বত্র নিচু তলার পুলিশকর্মীদের অভাবে ওঁরাই প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছেন।
নবান্নের খবর, কিছু দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের কথা বলেছিলেন। তার ভিত্তিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ।