আমতলার সাংসদ কার্যালয়ে অভিষেক। — নিজস্ব চিত্র।
২০১৯ সালে তিনি ডায়মন্ড হারবারে জিতেছিলেন সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে। এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচারপর্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ডায়মন্ড হারবারে তাঁর ভোটে জেতার ব্যবধান বেড়ে হবে চার লক্ষ। ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে তা সাত লক্ষ পার করে গিয়েছে। দেশের মধ্যে রেকর্ড গড়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি। যাঁদের জন্য তা সম্ভব হয়েছে, সেই নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে শুক্রবার নিজের সাংসদ অফিসে গেলেন অভিষেক।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আমতলায় সাংসদ কার্যালয়ে অভিষেক দেখা করেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। নির্দিষ্ট ভাবে কাউকে ডাকা হয়নি। খবর পেয়ে অসংখ্য কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়ে যান আমতলায় অভিষেকের অফিসে। সেই তালিকায় বিধায়ক, ব্লকের নেতা, অঞ্চলের নেতারা যেমন ছিলেন, তেমনই চলে এসেছিলেন বুথ স্তরের সাধারণ কর্মীরাও। এক বিধায়করে কথায়, ‘‘একটা সময়ে ভিড় সামাল দিতে আমাদের নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জানিয়েছেন, এই রেকর্ড গড়া সম্ভব হয়েছে কর্মীদের জন্যই। তাঁরাই দলের কাজ, সাংসদ হিসেবে তাঁর কাজ এবং সরকারের প্রকল্পের প্রচার করেছেন। মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছেন। ডায়মন্ড হারবার লোকসভার অন্তর্গত এক বিধায়ক বলেন, ‘‘অভিষেক এ-ও বলেছেন, যে বুথে আমাদের একটু খারাপ ফল হয়েছে, সেখানে কেন তা হল, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’’ কর্মীদের উদ্দেশে অভিষেক এ-ও বলেছেন, ‘‘বিজেপি সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট করেছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার করেছে, বিচারব্যবস্থা কুলষিত করেছে। অবশ্য ৪ জুন বাংলা এবং দেশের মানুষ নতুন ভোরের সাক্ষী থেকেছে। এই লোকসভা নির্বাচন ছিল প্রতিবাদ, প্রতিরোধের।’’
গত বুধবার দুপুরে অভিষেকের একটি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট তৃণমূলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। তা নিয়ে এখনও আলোচনা জারি রয়েছে শাসকদলের অন্দরে। যে পোস্টে অভিষেক লিখেছিলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য সংগঠন থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিচ্ছেন। তা ছাড়াও ইংরেজিতে লেখা ২১৪ শব্দের ওই পোস্টে নবজোয়ার যাত্রা, বকেয়া আবাস যোজনার বাড়ি নির্মাণ, সরকারের কাজ-সহ বিবিধ প্রসঙ্গের যে অবতারণা করেছিলেন তিনি, তা নিয়ে শাসকদলে মন্থন শুরু হয়। তৃণমূলের একটি বড় অংশের বক্তব্য অভিষেক রাজ্য সরকারের কাজে খুব সন্তুষ্ট নন। তিনি বেশ কিছু মন্ত্রী-আমলার কাজেও বিরক্ত। অনেকের দাবি, অভিষেক চান, সরকারের কাজের যথাযথ নজরদারি হোক। তৃণমূলে সকলেই জানেন, অভিষেক একমাত্র ‘পারফরম্যান্সে’ বিশ্বাস করেন। ‘কাজ করলে পদে থাকুন, নইলে রাস্তা দেখুন’ নীতি পুরোপুরি না-হলেও সংগঠনের অনেকাংশেই কার্যকর করেছেন তিনি। এখন অভিষেক চান সেই নীতি সরকার এবং প্রশাসনেও কার্যকর হোক। এ নিয়ে যখন জল্পনা চলছে শাসকদলের অন্দরে তখন শুক্রবার ডায়মন্ড হারবারের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে এলেন অভিষেক।