'আজাদ হিন্দ মঞ্চ ' ঘোষণায় আলি ইমরান রামজ ( ভিক্টর) ও ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্য বিদ্রোহী নেতারা নিজস্ব চিত্র।
দলের পতাকা ও মতাদর্শগত অভিমুখে বদল আনতে গিয়ে ফের ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়াল ফরওয়ার্ড ব্লক। দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে বিদ্রোহের ঘোষণা করলেন তরুণ নেতা আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর) এবং ফ ব-র জেলা নেতৃত্বের একাংশ। ‘আজাদ হিন্দ মঞ্চ’ গড়ে দলের পুরনো পতাকা নিয়েই প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। বিদ্রোহীদের মধ্যে যুব নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করেছে ফ ব। দলের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভিক্টর-সহ বাকিদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাম্প্রতিক কালে কলকাতায় ফ ব-র আন্দোলন কর্মসূচিতে সুদীপ এবং পরিষদীয় রাজনীতিতে ভিক্টরই দলের মুখ ছিলেন।
ভুবনেশ্বরে সম্প্রতি ফ ব-র জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দলের বর্তমান পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন বাদ দেওয়া হবে। মতাদর্শ হিসেবে ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে’র বদলে ‘সুভাষবাদ’কে সামনে রাখবে দল। আগামী বছর হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়ার কথা। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভিক্টরের অভিযোগ, ‘‘এত দিন পরে হঠাৎ কাস্তে-হাতুড়ি এবং সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়ার কথা মনে হল কেন? রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে একটা প্রস্তাব নিয়ে রাজ্য কাউন্সিলে নিয়ে যাওয়া হল, সেখানে প্রস্তাবের বিরোধী মতের লোকজনকে বলতে দেওয়া হল না। তার পরেও প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট বেশি ছিল, সেটা গ্রাহ্য করা হল না।’’ তিন বারের প্রাক্তন বিধায়কের আরও অভিযোগ, ‘‘দলের মধ্যে কোনও কথা বলার জায়গা রাখা হয়নি। রাজ্য সম্পাদক তাঁর ইচ্ছামতো যে কোনও কমিটি ভেঙে দিচ্ছেন। কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, চিত্ত বসু, অশোক ঘোষদের বামপন্থী একটা দলকে ডানপন্থী দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ কলকাতা প্রেস ক্লাবে সোমবার ভিক্টরের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন হাজির ছিলেন ফ ব-র রাজ্য কমিটির বেশ কয়েক জন সদস্য এবং অন্তত ৬টি জেলার নেতারা। রাজ্য সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক অস্বচ্ছতা’র অভিযোগও এনেছেন তাঁরা।
রাজ্য সম্পাদক নরেনবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘রাজ্য কাউন্সিলে ভোট হয়েছিল, সেখানে মাত্র দু’জন বিরুদ্ধে ছিলেন। ভিক্টরেরা সেখানে উপস্থিত থেকেও কিছু বলেননি। তা ছাড়া, পতাকা পরিবর্তনের বিষয়টা জাতীয় কাউন্সিল ও পার্টি কংগ্রেসের এক্তিয়ার। একটা রাজ্য নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারে না। দলের নিয়ম মানতে হয়।’’ নরেনবাবু জানিয়েছেন, সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের শো-কজ় এবং সাসপেন্ড করা হবে। ভিক্টর আবার চ্যালেঞ্জ করেছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে সাড়ে চার হাজার সদস্য আছে। বহিষ্কার করলে সকলকে করতে হবে। পুরনো পতাকা নিয়ে আমরা আসল ফ ব-ই করব!’’ যার ফলে কাল, বুধবার ফ ব-র প্রতিষ্ঠা দিবস ঘিরে নতুন টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।