অসচেতন। ফাইল চিত্র।
অনেকটাই তৈলাক্ত বংশদণ্ডে বাঁদরের উত্থান-পতনের মতো। বঙ্গে করোনার সংক্রমণ কোনও দিন অনেকটা উঁচুতে উঠে যাচ্ছে তো কোনও দিন নামছে কিছুটা। যদিও সংক্রমণের প্রাত্যহিক রেখচিত্রের এই ওঠানামা দেখে রাজ্যে অতিমারির তৃতীয় ঢেউ শেষ হয়ে গেল, এমন কথা নিশ্চিত ভাবে বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞেরা। প্রকৃত অবস্থা বুঝতে হলে তিন সপ্তাহের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল তথা এপিডেমিয়োলজিক্যাল বিভাগের প্রধান সমীরণ পান্ডা।
সমীরণবাবুর মতে, রাজ্যের সংক্রমণের রেখচিত্র এখন একটা স্থিতাবস্থার মধ্যে রয়েছে। তবে সেটা একই জায়গায় রয়েছে, না নীচে নেমে আসছে— তার ধারাবাহিকতা বুঝতে গেলে পরপর তিন সপ্তাহের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। সমীরণবাবু বলেন, “যে-কোনও ট্রেন্ড যদি বুঝতে হয়, তিনটি টাইম পয়েন্টের তথ্য দেখা প্রয়োজন। কেউ যদি বলে তিন দিন দেখে বলবেন, সেটা খুব ছোট সময়ের একটা জানলা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই ছোট সময়ের জানলায় দেখে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কারণ সপ্তাহান্তের তিন দিন— শুক্র, শনি ও রবিবার সংক্রমণের সংখ্যা তো একটু ওঠানামা করবেই। সেটাকে গোটা সপ্তাহের চিত্র বলা যায় না। তবে তিন সপ্তাহের চিত্র যদি একই থাকে কিংবা নেমে আসে, তা হলে বলা যায়, সেটা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ার একটি ধারা।” একই মত রাজ্যের সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদেরও। তাঁরা জানান, রেখচিত্রের থমকে যাওয়া বা ওঠানামার চিত্র দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগা মোটেই ঠিক নয়।
১১ মার্চের মধ্যে ভারতে কোভিড আর-পাঁচটা সাধারণ রোগের মতো অসুখে পরিণত হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে আইসিএমআর। তবে গোটা দেশে সব রাজ্যেই এক সময়ে কোভিড সংক্রমণ নেমে গিয়ে সাধারণ রোগে পরিণত হয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা অবশ্যই নেই বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা। তাই দিল্লি ও মুম্বইয়ে যখন কোভিড সাধারণ রোগে (এন্ডেমিক) পরিণত হবে, বঙ্গে হয়তো তার থেকে কিছুটা দেরি হতে পারে। সমীরণবাবুর কথায়, “দিল্লি, মহারাষ্ট্রে আগে অতিমারি শুরু হয়েছে। সেখানে হয়তো আগে প্রকোপ কমবে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র কী দাঁড়াচ্ছে, তা জানতে স্থানীয় স্তরে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে।”
যে-কোনও রাজ্যে সংক্রমণের হার কেমন ভাবে ওঠানামা করছে বা কোন দিকে যাচ্ছে, তা জানতে গেলে স্থানীয় স্তরের অর্থাৎ জেলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন বলেও জানাচ্ছেন ওই বিজ্ঞানী। তাঁর মতে, স্থানীয় তথ্য ঠিকমতো খতিয়ে দেখলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যায়। স্থানীয় তথ্যের নিরিখেই স্থানীয় ব্যবস্থাপনাও ভাল হয়।
বাংলার বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ কী ভাবে ওঠানামা করছে, সে-দিকে নজর রাখছে স্বাস্থ্য দফতরও। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গড় হিসেব ধরলে কয়েক দিন আগেও ২০-২২ হাজার ঘরে ঘোরাফেরা করছিল সংক্রমণ। এখন সেটা গড়ে ১০-১১ হাজারের ঘরে নেমে এসেছে। কলকাতার সংক্রমণ চলে এসেছে এক হাজারে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় দৈনিক সংক্রমণ কতটা এবং কী পরিমাণে ওঠানামা করছে, বিশেষ ভাবে সে-দিকে নজর রাখছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। যদিও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ থেকে চিকিৎসক
সকলেই মনে করছেন, শহর সংক্রমণ একটা স্থিতাবস্থার মধ্যে এলেও কয়েকটি বিভিন্ন জেলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “কয়েকটি জেলাতে ওমিক্রন ধীরে হলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ বুধবার রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১০,৯৫৯ জন। যা মঙ্গলবারের (১১,৪৪৭) থেকে কিছুটা কম। তবে ওই দু’দিনই দৈনিক পরীক্ষা এবং পজ়িটিভিটি রেট বা সংক্রমণ-হার অনেকটা একই ছিল। মঙ্গলবার রাজ্যে ৬৭,৪০৪ জনের পরীক্ষায় পজ়িটিভিটি রেট ছিল ১৬.৯৮ শতাংশ। বুধবার ৬৭,৩৬৭ জনের পরীক্ষায় সেই হার দাঁড়িয়েছে ১৬.২৭ শতাংশে। যা দেখে চিকিৎসক মহল জানাচ্ছে, সংক্রমণের হার এখনও কমেনি। তাই সুরক্ষা বিধি ঢিলেঢালা করলে বিপদ কমবে না, বরং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।