Sovon Chatterjee

শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে আদালতে দেবশ্রীর সাক্ষী রত্না, আইনি মঞ্চে মেলালেন কুণাল

শোভন নাটকে নতুন মোচড়! শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে দেবশ্রীর করা মামলায় সাক্ষী দিতে আদালতে পৌঁছে গেলেন শোভন-জায়া রত্না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১২:৩৩
Share:

শোভন, বৈশাখী, দেবশ্রী এবং রত্না। ফাইল ছবি।

শোভন নাটকে নতুন মোচড়! শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন তৃণমূল বিধায়ক তথা শোভনের একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেবশ্রী রায়। এ বার সেই মামলায় সাক্ষী দিতে আদালতে পৌঁছে গেলেন শোভন-জায়া রত্না। সঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনিও আবার শোভনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলার বিবাদী পক্ষ। তবে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই শোভন-বান্ধবী বৈশাখীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের মধ্যেই নতুন মাত্রা পেল বেহালার ‘চাটুজ্জে’ পরিবারের প্রকাশ্য কোন্দল। আলিপুর আদালত চত্বরে বৃহস্পতিবার রত্না বলেছেন, ‘‘দেবশ্রী আমাদের খুব ভাল পারিবারিক বন্ধু। আমার সঙ্গে এবং শোভনের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দেবশ্রী কোনও দিনই আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ঢোকেননি।’’ অর্থাৎ, প্রকারান্তরে রত্নার অভিযোগ, বৈশাখী তাঁর এবং শোভনের সম্পর্কের মধ্যে ঢুকেছেন। তবে রত্নার সাক্ষী হওয়া প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত শোভন-বৈশাখীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া দুপুর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

গত ২১ জানুয়ারি রায়দিঘিতে এক জনসভায় গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। সেই জনসভা থেকে স্থানীয় বিধায়ক দেবশ্রীর সমালোচনায় মুখর হন দু’জন। অভিযোগ, শোভন সেখানে দেবশ্রীকে ‘অযোগ্য বিধায়ক’ বলে দাবি করেন এবং ২০১৬ সালের ভোটে তাঁকে জেতানোর জন্য এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমা চান। সঙ্গে নাম না করে ‘টোটো কেলেঙ্কারি’ নিয়ে দেবশ্রীকে আক্রমণ করেন। একই সুরে দেবশ্রীর সমালোচনা করেন বৈশাখীও। বলেন, ‘‘উনি তো সিনেমাতেও নেই। রাজনীতিতেও নেই!’’ তারই জবাবে গত ৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী। সেই সঙ্গে আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের সামনে একাধিক অভিযোগও তোলেন।সেই অভিযোগে এক সঙ্গে শোভন ও বৈশাখীকে আক্রমণ করেন দেবশ্রী।

Advertisement

এর পরে বিজেপি-র মঞ্চ থেকেই দেবশ্রীকে জবাব দেন শোভন-বৈশাখী। প্রতিটি অভিযোগ ধরে ধরে সেই জবাবের মধ্যে এমনও ইঙ্গিতও দেন যে, তাঁর দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার জন্য দায় রয়েছে দেবশ্রীরও। বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগ নিয়েই দেবশ্রীর পাশে দাঁড়িয়ে স্বামী শোভনকে আক্রমণ করেছেন রত্না। মামলা করার দিন দেবশ্রী বলেছিলেন, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় মতো মানুষেরা সামাজিক অস্বস্তি। পরিবার, সন্তানের কাছে, স্ত্রী-র কাছে যে আপন নয়, সে কত বড় নেতা? সে কি জনপ্রিয় নেতা হতে পারে? মানুষের সামনে দাঁড়াতে পারে?’’

মামলার জবাব আদালতে দেবেন বলে জানালেও সেদিন বৈশাখী দেবশ্রীকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেছিলেন, ‘‘উনি তো ‘পলিটিক্যাল এমবারাসমেন্ট’। রাজনৈতিক অস্বস্তি।’’ শোভনের আক্রমণ ছিল আরও জোরালো। তিনি বলেছিলেন, ‘‘উনি সন্তানের মা নন। আর সংসার? ওঁর যে সংসার ছিল, তার কী পরিণতি হল সেটা যেন মানুষের কাছে খোলসা করেন। আমি তো নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছি। সেই মামলা চলছে...। মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। কথায় বলে, সে কে? ডাইনি!’’

কুণাল অবশ্য এই বিবাদের মধ্যে ঢোকেননি। তিনি মঙ্গলবার শোভনের বিরুদ্ধে আলিপুর আদালতে ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি শোভনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথা জানিয়েছিলেন কুণাল। কারণ, তার আগে সাংবাদিক বৈঠক থেকে কুণালকে ‘পকেটমার’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন শোভন। শুধু তা-ই নয়, সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ‘বেতন পাওয়া’ কুণাল ‘দালাল’-এর কাজ করতেন বলেও আক্রমণ করেছিলেন তিনি। শোভন এর আগে কুণালকে ‘নটোরিয়াস ক্রিমিনাল’ বলেও আক্রমণ করেছিলেন। সেই বিষয়ে কুণালের বক্তব্য, ‘‘শোভন রাজনৈতিক যুক্তি হারিয়ে আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা শুধু অরাজনৈতিকই নয়। অসংসদীয় ও কুরুচিকর। আমি ওঁকে এর জবাব রাজনৈতিক ভাবে দেব। রসিকতায়ও দেব। উনি যেহেতু তালজ্ঞান হারিয়ে কুৎসিত ভাষার ব্যবহার করেছেন, তাই আমি ওঁর বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাই করব।’’

বৃহস্পতিবারও কুণাল আলিপুর আদালত চত্বরে শোভনকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘আমি কী ভাবে ক্রিমিনাল হলাম! আমি তো ওঁকে কোনওদিন ঠাস করে চড়ও মারিনি। আদর করে গালও টিপে দিইনি!’’ আগেই শোভনের ‘গ্ল্যাক্সো বেবি’ নামকরণ করেছিলেন কুণাল। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘উনি সুবর্ণগোলকের গ্ল্যাক্সো বেবি।’’ তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ‘সুবর্ণগোলক’ বলতে কুণাল বৈশাখীকেই ইঙ্গিত করেছেন। সম্ভবত তাঁর পরিধানে স্বর্ণ আভরণের বাহুল্যের কারণে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement